চোখ গেল

অলংকরণ
আপন জোয়ার্দার

যে জেনেছে বস্তু আর অবস্তুগত বিষাদ,

পঙ্খিরাজ আর রাজত্ব তারই না কেবল পাবার ছিল!

কিন্তু পেয়ে গেল এক জীর্ণ কুটিল ভিক্ষুক। যে শহরের শেষের নিমগাছটার নিচে বসতো..

তার পাশে দিয়ে চলে যেত কত পথিক, উড়ে যেত ঝড়,

ফেরিওয়ালার পায়ে পায়ে চলে যেত কত ধুলা!

সে পথিকের কাছে গল্প শুনতো,

সেই গল্পটাই আবার অন্য পথিককে বলতো।

যে সানতাল ছেলেটা গরু বেঁধে রেখে মাছ ধরতে এসেছে বিলে

তাকে এই অন্ধ ভিক্ষুক গল্প শোনায়...

এক সমুদ্র মানুষ ঠেলে এক অশ্বত্থকুমারী জন্ম দিল এর কুকুরশাবকের, যার চোখ ফোটেনি, নাড়ি পড়েনি।

পাড়ার মা নেড়িটার হয়তো তাকে মুখে করে নিয়ে হাঁটবার কথা ছিল।

কিন্তু হাঁটেনি। ফেলে গেছে।

সে থেকে গেছে অশ্বথিনীর কাছে। কী সেই মহাপ্রলয়ের রাতে! সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার৷

সিলিংয়ে ফ্যানের ঘটঘট আওয়াজ আর বিছানা জুড়ে উন্মাদনা।

হঠাৎ বাচ্চা কাঁদে।

যশোধা তড়িঘড়ি করে মাঝপথেই সব থামিয়ে বুকে নিয়ে ঘুমায় কুকুরশাবককে।

সেই মহাক্ষণ..

জোছনার বিস্ময়ে সে ছানা কী খুঁজিতেছিল? কুয়াশার অল্প ধোঁয়াশায় সে প্রেমিক কী খুঁজিতেছিল?

পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনেছি, দেখেছি হাঁসেদের সাঁতার, ডলফিনের প্রেম

তবু মা হতে হয় কিভাবে কে জানে! প্রেমিকা হতে হয় কিভাবে কে জানে!

দেখা গেল কুকুরও পৃথিবীর অন্যান্য শিশুদের মতোই।

খুঁজে বের করে মায়ের স্তন।

যত শক্তি আছে নিয়ে টানতে থাকে।

আর প্রেমিক!

সে-ও!

ভোরবেলায়

চলতে থাকো মহাপ্রলয়..

তখনও বিছানায় সে নারী মাটি হয়ে যায়, ঘাস হয়ে যায়, ফুল হয়ে যায়।

সন্তান নিবারণ করে ক্ষুধা। প্রেমিক নিবারণ করে ক্ষুধা। পৃথিবীর আদিম ক্ষুধার খাদ্য দিতে থাকে সেই নারী।

একমাঠ শস্য যেন এই ক্ষেতেই।

এই মগজেই, এই দেহেই।

এই মাঠেই এই নিশ্বাসেই এই গল্পটা যাকে অপেক্ষায় রাখে, তাড়া করতে থাকে।

কুমারী কিশোরীর মতো..

শরীর বেয়ে সকল শক্তি নিঃশেষ করে বৃষ্টি ঝরে

ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে,

ভোরে যে বৃষ্টি ঝরে

চোখে যে বৃষ্টি ঝরে...

অনন্তকাল...

তবু কি বলতে পারো

কোনটির বেদনা অধিক থরথর

সন্তান নাকি মায়েস্ত্রোকে হারানোর?

তবু কি বলতে পারো?

যাতনা পাবে না কেউ আরো?