আব্বার মৃত্যুর পর উত্তর আকাশে মেঘ জমেছিল। মেঘ ডাকছিল শীতে। সূর্য নেমেছিল মেঘেরও নিচে। তাহলে আব্বা কি মেঘের জন্য জেগে ছিলেন! দেখলাম: আব্বার মৃত্যুতে আমাদের জানালার মৃত কাঠগুলো গুমরে কাঁদছে। কাঠের আলমারি থেকে শব্দ হচ্ছে। আম্মা চৌকাঠের ভাষা বুঝতেন। শব্দমাত্র জড়। স্থিতি জড়তার যেখানেই শেষ, সেখানেই অর্থ শোকাকুল হয়। আমরা কখনো ভাবিনি, এমন জড় পদার্থও আব্বাকে ভালোবাসতেন।
পুকুরের মাছগুলো সেদিন ডাঙায় উঠেছিল। আব্বার বিদায় তারাও মানেনি। আমাদের বাগানের বাঁশগুলো হেলে গেল মদিনার দিকে। আমরা তাকিয়ে ছিলাম নোয়াবাড়ির দিকে। সেখানে কাঁদছে জারুল পারুল বাদাম শেফালি কড়ই সেগুন মেহগনিগাছ। আব্বা একদম চুপচাপ। নিথর চোখের মধ্যে আব্বার দুই মণি সাদা হয়ে গেল। দেখলাম: দুই চোখে কদম ফুলের আভা। আমরা তখনো ভাবিনি, জীবন এত অন্ধকার!
কত দিন আব্বাকে ডাকি না। আব্বাও জানেন, আমার অক্ষম বাক্য কবর পর্যন্ত যাবে না কখনো। সন্ধ্যা হলে আব্বার কবর কে যেন পাহারা দেয়। পাখি ডাকে সারা রাত। মাঝে মাঝে সাদা ফেরেশতা হেঁটে যানরমনাগাছের দিকে। আর কবরের ঘাসগুলো সাদা হয়ে যায়। জোনাকির মতো আমি তার মাজুল সন্তান। জানি না কিছুই। ফের যদি মৃত্যুদিনে স্বপ্নে জিজ্ঞাসা করেন: আমাদের ইহজাগতিক বুদ্ধি কেন এত কম? নির্ভয়ে বলব: ইহজাগতিক নিদ্রা হতে কবরের ঘুম অধিক উত্তম।