
আমি আজও সম্পূর্ণ সুরাইয়া হয়ে উঠিনি
আমি আজও সম্পূর্ণ সুরাইয়া হয়ে উঠিনি, জনাব।
আজও আমি ক্রমাগত ক্রমান্বয়ে হয় এর মাপ
নয় ওর ছাপ। প্রতিদিন জন্ম তার,
আমার ললাটজুড়ে্—এমনকি বলতে পারেন,
সমস্ত শরীর কিংবা শরীরের খোলসের
আড়ালে শরীর ভরে ফুটে ওঠো
পাপে-তাপে আকীর্ণ অক্ষরভরা অচিন সংলাপ
স্বপ্ন তার নাম, নাকি বাস্তবতা প্রতিদিন জন্ম তার।
অথচ সঙিন কারবালা, কুরুক্ষেত্র, গিলগামেসের মৃত্যু, আর
সেই সব পেরিয়ে রঙিন এক হাসি
হৃদয়ে সেঁধোয়। প্রতিদিন জন্ম তার।
আমি সরোবরে যাই, স্বর শুনি শরবিদ্ধ হই
অন্যরা শরীর দেখে শরীর দেখে।
শরীরের কসরত দেখায়।
আমি আজও সম্পূর্ণ সুরাইয়া হয়ে উঠিনি, জনাব।
এই মোর অধিকার, এই মোর সত্তার গোলাপ—
প্রতিদিন জন্ম তার।
এই ভালোবাসা আজ, এই সব মনস্তাপ, পাপ
টিটকারি, থুতু, ছুরি—এই সবে গেঁথে যাই আত্মার মেরাপ।
এপিটাফের জন্য
কত শতাব্দীর শিশির লিখে দেবে আমার স্মরণস্তুতি, জানতে চাই না
মরমে কত মরণ নিয়ে মৃৎশিল্পের জাদু জানলাম বোঝাতে পারিনি
এ কথা সত্য—পাখি হয়ে গেছি, বুকের খাঁচাটা শূন্য লাগছে,
আকাশে উড়ছি
মাঝে মাঝে নামি গোপন বিবরে ঘুরে ঘুরে দেখি আহা আজও একি
রয়েছে তেমনি শিকড়ের ঘুম।
২.
এপিটাফে শুধু এই লেখা থাকে কেউ বেসেছিল ভালো তাই কারও
কারও এপিটাফ থাকে
এপিটাফ থাকে। সমুদ্র যাকে ভালোবেসেছিল?
বাংলাদেশের কবিতায় সুরাইয়া খানমের আবির্ভাব ষাটের দশকের শেষে। সত্তরের কবি হিসেবে স্বমহিমায় প্রকাশিত হন তিনি। ছিলেন কবি আবুল হাসানের প্রেমিকা। তাঁকে উৎসর্গীকৃত পৃথক পালঙ্ক কবিতাগ্রন্থে আবুল হাসান লিখেছিলেন, ‘তুমি শিল্পিত বৃক্ষের চূড়া: দেবদারুর মতো/মুগ্ধ কিন্নরের অবিনাশী গান।’
আবুল হাসান ছাড়াও সে সময়ের আরও অনেক কবি-সাহিত্যিকের কাছে সুরাইয়া ছিলেন ‘অর্ধেক মানবী, অর্ধেক ঈশ্বরী’র মতো। সবকিছুর পরও সুরাইয়া খানম ছিলেন নিজের প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। তাঁর কবিতাতেও ছিল নিজস্বতার স্বাক্ষর। এখানে পত্রস্থ হওয়া তাঁর কবিতাগুলো জার্নিম্যান বুক থেকে সদ্য প্রকাশিত এবং ইসরাইল খান সম্পাদিত সুরাইয়া খানম: গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতা শিরোনামে বইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে নেওয়া হয়েছে।