অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান
অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

গুচ্ছকবিতা

বুদবুদের হাসি

টারকুইজের সামনে দাঁড়ায়ে

কাগজ–কলম ছাড়াই এখন লেখো আলো-আঁধার,

তবু আমার ছায়া পড়ে না তোমার অক্ষরে

তুমি তো অনেক কিছু নিয়ে লেখো যা লেখে তরুণ কবিরা,

ঝড়ের গান, মোরগের হাসি, ভাঙা স্বপ্নের হীরা।

তুমি লেখো অনেক কিছু যা তোমার অচেনা,

যে তারার আলোয় লুকানো অনেক গল্প, তার রহস্য

লেখো অনেক কঠিন করে আবার কিছুবা সহজ আরবান স্ল্যাং,

যা বলো ইনসেল ভাষায়,

মরুভূমির ফুলের অচেনা বৃতিতে ফুটে থাকো।

পৃথিবীর সব গ্লেসিয়ার গলে শেষ হয়ে যাবে

নীল-সবুজ লেক হারাবে তার রং

তবু তুমি লিখে যাবে জানি যত দিন কি–বোর্ডে জোয়ার আসে,

আমার নাম না লিখলেও আমি থাকব তোমার কবিতায়।

হয়তো কোনো দিন, কোনো অজানা বিকেলের আলোয়,

টারকুইজের সামনে দাঁড়ায়ে

তোমার মনে হবে—আরে এ যে তারে নিয়ে লিখেছিলাম!

আমি তো তাহলে তারে ভালোবাসতাম!

যুদ্ধদিনে

যুদ্ধদিনে ফুল ফোটে আর

ভাবো যে ফোটে মিসাইলে

প্রেম কি আসে হামানদিস্তায় পিশাইলে?

বুকপকেটে রাখলে কেন

মিথ্যা কথার ফুলঝুরি

যুদ্ধ লাগে আকাশ পথে

দূরপাল্লার ফুরচুঙি

তোমার দাদায় করেছিল জল ঘোলা

জায়োনিস্টদের মনে আসে মিথের দোলা

যুদ্ধ লাগায় প্যালেস্টাইনে আর

চুপ থাকে সব শিয়া–সুন্নির অবুজ পোলা

যুদ্ধ মানে আত্মপ্রচার শোরগোল আর

গিট্টু লাগে নার্ভে

তোমার সাথে প্রেম হলে কি

সেই তাপে ভয় সারবে?

পাঠ্য কবিতা

আজ যখন গুগল আর্থে আমাদের সেই কালের হাঁটার পথটারে

ম্যাপে আঁকতে আঁকতে

দেখছিলাম অনেকগুলি ঘাস

একটা চিকন মাঠে এক বৃষ্টির দিনে গাছের নিচে দাঁড়ালে

একটা বুড়ি কেন বলেছিল:

ইশ্, তোমার চুলগুলা ভিজা

তুমি ছিলে আমার নির্বোধ কবিতাদিনের প্রথম পাঠিকা

স্কুলের পড়া ফেলে আমার কবিতায়

তোমার চোখে জ্বলেছিল মর্নিংস্টারের আলো

তুমি ছিলে আমার রাক্ষসদিনের

নরম ডিমগুলি ভেঙে ফেলার প্রথম সূত্রপাত

আমি শক্ত হবার জন্য প্রথম তোমাকেই খেয়েছিলাম!

কী ছোট্ট সেই শহর, কী নরোম তার মেরুদণ্ড!

রাত হলেই কান পেতে অপেক্ষা করতাম কখন শুরু হবে বেশ্যাদের গান

হার্মোনিয়ামে ঝাপতাল নূপুরের রুমঝুম সারা রাত হাসির কলরব।

সকালে নতমুখে খালি পায়ে জবুথবু সেই মেয়েদের

মুদিদোকানে যেতে দেখে

আমরা তাকাতে পারতাম না লজ্জায়

আবার বছর বিশেক পরে তুমি বাংলার অধ্যাপিকা,

তোমারে জিগাইলাম: ছাত্রদের কি আমার কবিতা পড়াও?

তুমিও কেমন লাজুক হয়ে গেলে

বললে: কীভাবে তা সম্ভব?

আপনার কবিতা কেন ওরা পড়বে...ওগুলা তো পাঠ্য না!

আমি যেন ঢাকা শহরের এক বিউটি পারলার

আমি যেন ঢাকা শহরের এক বিউটি পারলার

আমার কাজ হচ্ছে গাধাদের লোম ব্যবস্থাপনা।

আমি একখণ্ড জমি,

আমার বুকে সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি করে

পেটে টাকার গ্যাস হওয়া অ্যানিমেল।

বুদবুদের হাসি সহ্য করতে হচ্ছে

গুপ্তঘুঘুদের এই শহরে।

একটা অট্টহাসি দিয়ে আকাশরে নামাই

গলদা চিংড়ির পিঠে স্বপ্নের মাজার ভাসে।

এত তীব্র তোমার প্রেম যে মনে হয়

তুমি একটা প্রচণ্ড ঝালের বাইরে থাকা

সুতন্বী কাঁচা মরিচ।

এত মিষ্টি তোমার প্রেম যে

মনে হয় তুমি পচে গেছ আম।

পথে পথে ছড়ানো সোনার মুকুট

টুপ করে যেকোনো উপরতলার বেলকনি থেকে

বড়শি নেমে আসবে

তখন আমরা চিনি ছাড়া লাল গরম চা ঢালব

তোমার মাথায়।

আমি এই শহর থেকে কোথাও যাব না।

মৃত বন্ধুর উদ্দেশে

মারা যাবার পর কী করতেছ তুমি?

তার চেয়ে বেশি মনে পড়ে

এই অঙ্কখানা—তুমি আর জীবিত নও

একটা মুখের দানা কম খরচ হলেও তো লাভ!

তুমি আমার জন্য আরও কিছুটা অক্সিজেন রেখে গেছ

ধন্যবাদ!

তোমার জন্য মেট্রোর সিটটা পেলাম, ধন্যবাদ!

তুমি আমার আইডি পিক দিয়ে কোনো অ্যাকাউন্ট খুলবে না, ধন্যবাদ!

তোমার জন্য আমার আর শ্বাসকষ্ট হবে না, ধন্যবাদ!

শুকরিয়া, ধন্যবাদ—তুমি মরে যাবার জন্য।