অলংকরণ: মাসুুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুুক হেলাল

সরদার ফজলুল করিমের আত্মকথা

স্মৃতির আয়নায় আমার একাত্তর

আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজনে সরদার ফজলুল করিমের এই স্মৃতিগদ্য প্রথম ছাপা হয়েছিল। আমাদের বহু মূল্যবান লেখা শুধু মুদ্রণের পাতায় রয়ে গেছে; তেমনি একটি এই ‘স্মৃতির আয়নায় আমার একাত্তর’। তবে দীর্ঘদিন কেবল ছাপার পাতায় সীমাবদ্ধ থাকা এই লেখা বিজয়ের মাসে অনলাইনে উঠে এল নতুন পাঠকদের সামনে।

বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনলাইনপূর্ব যুগে যত লেখা, সাক্ষাৎকার, স্মৃতিচারণ ও কবিতা ছাপা হয়েছিল, বিজয়ের পুরো মাসজুড়ে সেসব ধুলোঝরা পৃষ্ঠা আমরা প্রথমবারের মতো অনলাইনে তুলে আনছি।

আমরা আত্মাকে ডেকেছিলাম।

পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাতে বন্দী ঢাকার অসহায় মানুষ আমরা।

ওরা ২৫ মার্চ রাতে অতর্কিত আক্রমণে আমাদের ঘেরাও করে ফেলল। ট্যাংক, কামান আর মেশিনগানে ওরা ঢাকার বুকে সে রাতে রাজারবাগ পুলিশ ঘাঁটিতে, পিলখানায়, ইকবাল হল (জহুরুল হক হল) আর জগন্নাথ হলে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করল।

পুরো ২৬ তারিখ ওরা সান্ধ্য আইন জারি রেখে চালাল হত্যালীলা। ২৭ মার্চ কয়েক ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন তুলে নিতেই হাজার নয়, প্রায় এক লাখ অসহায় মানুষ কাপড়চোপড়ের একটি করে পুঁটুলি নিয়ে অবোধ শিশুদের কোলে, কাঁখে, মাথায় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল ঢাকা শহর ছাড়ার জন্য। সন্ধ্যা হয়–হয়, তবু অসহায় ভয়ার্ত মানুষের বিরাম নেই। বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে পেলাম না, কোথায় যাবে ওরা? কেমন করেই বা যাবে? হানাদার বাহিনী বিনা অজুহাতে গুলি করছে, আগুন দিচ্ছে।

২৬ তারিখ বিকেলে মতিঝিল কলোনির বাসা থেকে দেখলাম, দক্ষিণ দিকে ঊর্ধ্বগতি কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। সেদিন বুঝিনি। পরে শুনেছি, সেদিন ওরা ইত্তেফাককে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করেছে।

কিন্তু এত মানুষ কেমন করে বেরিয়ে যাবে এই অবরুদ্ধ ঢাকা শহর থেকে? খবর পেলাম, শহর ছাড়ার সময়ও বহু মানুষকে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। জিঞ্জিরা বাজারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড তো কয়েক দিন পরের ঘটনা। ২ কিংবা ৩ এপ্রিল ওরা চারদিক ঘেরাও করে সকাল থেকে গুলি করতে আরম্ভ করেছে জিঞ্জিরায় আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার মানুষের ওপর। জাহাজের ওপর কামান বসিয়ে জিঞ্জিরা বাজার তাক করে ওরা গোলাবর্ষণ করেছে। চারদিকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ভয়ার্ত মানুষ কোরআন খুলে বসেছে, কালিমা পড়েছে আর পাকিস্তানি বাহিনী হাসতে হাসতে মেশিনগানের ঝড় তুলে ভয়ার্ত মানুষকে ভূলুণ্ঠিত করে দিয়েছে আর ব্যঙ্গ করে বলেছে, ‘কালিমা পড় লিয়া তো আব শাহিদ হো যাও!’

এই ভয়ংকর অবস্থায় ছোট্ট তিনটি ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী কোথায় যাব, কোথায় পাড়ি জমাব? তাই আমরা প্রায় মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। বন্দী ঢাকাতেই রয়ে গেলাম।

তারপরের জীবন? সে তো মৃত্যুর পরে মৃতের জীবন। তার আকুতি আর অসহায়তার কথা কোনো দিন সত্যি কাউকে শোনাতে পারব, এমন কথা সাহস করে ভাবতে পারিনি। যে অযুত প্রাণের সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে আমাদের মতো হতভাগ্য মানুষ বেঁচে থাকতে পেরেছে আর সেই ভয়ংকর দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করতে পারছে, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সে ঋণের কোনো প্রতিদান নেই। আজ মনের চোখে যখন এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের মাসগুলোর প্রতিদিনের, প্রতিমুহূর্তের পাতা উল্টেপাল্টে দেখি, তখন সে জীবনকে কী করুণ আর অসহায় বোধ হয়!

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

বন্দী ঢাকার রাস্তায় লোকজন নেই। বিকেল না হতেই খাঁ খাঁ করে। সামরিক বাহিনী টহল দেয়। গাড়ির মাথায় মেশিনগান বসানো। একাডেমি শুধু আমাদের অফিস নয়।

একাডেমি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এ জন্যই ২৬ মার্চ সকালে ওরা একাডেমি লক্ষ্য করে কামান দেগে একাডেমিকে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

গণজাগরণের দিনগুলোয় একাডেমি ছিল সহস্র জনতার পায়ের ধ্বনিতে মুখর। এপ্রিল, মে মাসেও একাডেমিতে সকালে গিয়েছি আর দুপুরে ঘরে ফিরেছি। অফিস করতে নয়, উদ্বেগাকুল আর বিপন্ন সহকর্মীদের খবর দিতে, খবর নিতে। কেমন আছেন? কেমন আছ? বিপদ হয়নি তো কোনো? জড়ো হই মনের সঙ্গে, যার মনের বন্ধন আছে, তার সঙ্গে দুটো কথা বলতে: জয়বাংলা বেতার তরঙ্গটা কাল যে শুনতে পেলাম না। বলতে পারো কোন পয়েন্টে ওকে ধরা যায়? কানের কাছে মুখ নিয়ে বলার মতো বন্ধু জবাব দেয়: সেটের একেবারে ডান দিকে বিবিসির কাছেই। ওরা এখন শর্টওয়েভে ছাড়ছে।

এই ভয়ংকর অবস্থায় ছোট্ট তিনটি ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী কোথায় যাব, কোথায় পাড়ি জমাব? তাই আমরা প্রায় মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। বন্দী ঢাকাতেই রয়ে গেলাম।

আলাপ করি: কালকের সংবাদ পরিক্রমা আর সংবাদ বিচিত্রা শুনেছেন? একটি মুজিবরের কণ্ঠ হতে লক্ষ মুজিবরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি গানটি খুব ভালো লেগেছে। বিবিসি খবর দিয়েছে, ঢাকায় মুক্তিবাহিনী অ্যাকশন শুরু করেছে।

: টিক্কা খান কি সত্যি আছে? অনেকে তো বলে, এ টিক্কা সে টিক্কা নয়। অন্য কাউকে টিক্কা বলে চালিয়েছে। আসল টিক্কা খতম হয়েছে।

: পাকিস্তানি ফৌজ খতম হচ্ছে কম নয়। ওরা তিন দিনে খতম করতে চেয়েছিল বাংলাদেশকে। আজ তিন দিন থেকে তিন মাস গড়িয়ে চলেছে। ভাইজানরা বুঝতে শুরু করেছে, বাংলাদেশ বড় কঠিন জায়গা, কী, আর কতকাল?

: অস্থির হয়ো না। দেখো না ভিয়েতনামের যুদ্ধ। বাংলাদেশে নতুন। ভিয়েতনামের স্বাধীনতার মরণপণ লড়াই শুরু হয়েছে।

: ভবিষ্যদ্বক্তা জিন ডিকসনের বাণী, দেখো, ঠিক ফলে যাবে। আগেও তো এর বাণী ফলেছে বলে শোনা গেছে।

: কী বলেছে জিন ডিকসন?

: কেন, শোনোনি? জিন ডিকসন বলেছে, ১৯৭১ সালে এশিয়া ভূখণ্ডে জন্মলাভ করবে নতুন এক স্বাধীন রাষ্ট্র আর কোনো এক রাষ্ট্রনেতা হয় পাগল হয়ে যাবে, আত্মহত্যা করবে, নয়তো নিহত হবে।

: খেয়াল রেখো, আলোচনার সময় সন্দেহজনক কোনো লোক যেন না আসে।

: প্ল্যানচেটে বিশ্বাস করো তুমি?

: আজ সবকিছুতে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি তাকেই, যে আমাকে আশ্বাস দেয় এই নরপিশাচদের মৃত্যুর।

: তোমরা তো প্ল্যানচেটে বিদেহী আত্মা ডাকতে পারো। বসো না প্ল্যানচেটে অফিসেই একবার।

কী করব আমরা, অসহায় বন্দী মানুষেরা? আমরা তা–ই করলাম। দুই বন্ধু বসলেন টেবিলে। আঙুলে আঙুল ঠেকিয়ে। চক্ষু বন্ধ। অক্ষরে অক্ষরে আত্মার প্রশ্নোত্তরের সংকেতভূমি রচনা করা হলো। উদগ্রীব হয়ে রইলাম।

: কই, এল কেউ?

চোখ বন্ধ করা প্ল্যানচেটের আসনের বন্ধু প্রশ্ন করলেন আত্মাকে, ‘আপনি যদি এসে থাকেন, আপনার নাম বলুন।’

আঙুল কেঁপে কেঁপে চলতে থাকে। অক্ষর থেকে অক্ষরে চলতে চলতে আঙুল নাম বলে: হক সাহেব।

হক সাহেবের আত্মা এসেছে।

আবার প্রশ্ন হয়।

: বাংলাদেশ স্বাধীন হবে? স্বাধীন হলে বলুন: হ্যাঁ।

আঙুল নড়ে উঠল। ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে অক্ষর থেকে অক্ষর ঘুরে আত্মা জবাব দিল: হ্যাঁ।

আবার প্রশ্ন হলো: আপনি বলুন, আমাদের এ মুক্তিসংগ্রাম জয়লাভ করবে কোন ফ্রন্টে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে না যুদ্ধের ফ্রন্টে?

আঙুল আবার নড়ে। জবাব তৈরি হয়: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।

: আপনি বলুন, কত দিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হবে?

আঙুল আবার নড়ে। আবার জবাব বেরোয়: সময় লাগবে।

: আপনি যদি জানেন তাহলে বলুন, কোন বছর এ যুদ্ধের শেষ হবে?

জবাব এল: ’৭২ সালে।

: বলুন, কোন মাসে?

আঙুল নড়ে, জবাব তৈরি হয়: এপ্রিল মাসে।

জবাব শুনে মনটা যেন একটু দমে যায়। কেননা এর আগে কোনো কোনো আত্মা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই পাকিস্তানের চরম পরাজয় ঘটবে।

সরদার ফজলুল করিম (১ মে ১৯২৫-১৫ জুন ২০১৪)

কী বলব এই প্ল্যানচেট করাকে? কোনো দিন এমনভাবে বিদেহী আত্মার আগমনকে বিশ্বাস করিনি বা গুরুত্ব দিইনি। ছাত্রাবস্থায় পরীক্ষার সময় ছাত্রছাত্রীরা নাকি এরূপ প্ল্যানচেট করে থাকেন। পরীক্ষায় তাঁরা কৃতকার্য হবেন কি না, তা আগাম জানার জন্য। এ কথা শুনে হেসেছি। কিন্তু নিজেদের ভাগ্যের চরম পরীক্ষার ভবিষ্যৎ জানতে আজ আর আত্মাকে ডাকার ব্যাপারটি নিয়ে পরিহাস করতে পারছি না। বুদ্ধি দিয়ে বুঝি যে প্ল্যানচেটে আসন গ্রহণকারীর জবাবের আঙুল যেন আমাদের বন্দী মনের স্বপ্নের ইঙ্গিতে অক্ষর গুনে গুনে চলে। তবু, তবু তো তাকে অবিশ্বাস করতে মন চায় না।

আর ইউ সরদার ফজলুল করিম? আমি বললাম: হ্যাঁ। ওরা বলল, তোমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। বলেই অপেক্ষমাণ জিপে আমাকে তুলে নিয়ে মুহূর্তে জিপটা বেরিয়ে এল বহু বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাংলা একাডেমির অফিস থেকে।

কিন্তু প্ল্যানচেটে মজার কাহিনিও ঘটে। বন্ধু বলে: জিন্নাহ সাহেবের আত্মাকে কাল রাতে ডেকেছিলাম।

: ভারি মজার তো। তারপর? তারপর?

: মেজাজটা বড় কড়া। কথা বলতে চায় না। নাম বলতে চায় না।

: কী জিজ্ঞেস করেছিলে?

জিজ্ঞেস করেছিলাম, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী?

: কী বলল?

: কথা বলতে চায় না।

: তারপর?

: আবার জিজ্ঞেস করলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে?

: কী জবাব দিল?

: জবাব দিল, হবে।

: আচ্ছা, বড় মজার জবাব তো। ভূতের মুখে রাম নাম!

: তখন চেপে ধরলাম, বলুন, কবে হবে?

: কী বলল?

: এর আর জবাব দিতে চায় না। বারবার জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু জবাবও দেয় না, আবার আমাদের আঙুল থেকে ভরও সরায় না। অনেক কষ্টে শেষে তাকে তাড়াতে হয়েছে।

প্ল্যানচেটের আত্মা আমাদের ব্যক্তিগত ভাগ্যের হদিস দিতেও কসুর করত না।

জিজ্ঞেস করেছি, বার্ট্রান্ড রাসেল কিংবা আব্রাহাম লিংকনকে: বলুন, অধ্যাপক...কোথায় আছেন?

জবাব এসেছে: আগরতলায়।

আমি করুণভাবে বললাম, তোমাকে না বলেছিলাম, আমার ভবিষ্যৎটা একটু জিজ্ঞেস করবে।

বন্ধুবর মুখখানা স্নান করে বলল, ‘করেছিলাম কাল রাতে।’

: কী জবাব দিল আত্মা?

: বলল, ভবিষ্যৎ ভালো নয়। তোমার পক্ষে ইন্ডিয়ায় চলে যাওয়াই ভালো।

আমি জানি, আমার পক্ষে ইন্ডিয়ায় চলে যাওয়াই ভালো। তাতে আমার নিজের জীবনের নিরাপত্তা আসবে। তখন আর দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টার প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে মৃত্যুর আতঙ্ক থাকবে না। কিন্ত অবোধ শিশু আর স্ত্রী নিয়ে আমার সংসার। সংসার নয়, ছোট্ট পাখির বাসা। আমার মতোই হাজার হাজার পরিবার অসহায়। আমি কোথায় যাব আমার পাখির বাসাকে বর্বরের হাতে ছেড়ে দিয়ে? না, আমি তা পারব না। প্রতি রাতে বাসার দুয়ারে জিপের শব্দে শিশুপুত্র আতঙ্কে আমাকে জড়িয়ে ধরে: আব্বা, এই জিপ এসে থেমেছে। আমি জানি, ওই জিপ একদিন আমার জন্যই আসবে। আসুক। এসে আমাকে টেনে নিক। গুলি করে মেরে ফেলুক। তবু যেন না পাখির ছানার মতো আমার নিরীহ সন্তানদের ওপর অত্যাচার করে। শুধু আজ নয়, করুণ হাসি ফুটেছে নিজেরই মুখে সেদিনও, এই নির্বোধ কামনায় কত শিশুকে ওরা খুন করেছে মা-বাবার সামনে, সে কাহিনি কি কান থেকে কানে ছুটতে ছুটতে সেদিন আমার কানেও পৌঁছায়নি? তবু আমি ছেড়ে যেতে পারিনি আমার অসহায় স্ত্রী আর সন্তানদের আরও অসহায় করে। আমাকে পেলে হয়তো পশুগুলো ওদের হত্যা করবে না, হয়তো শুধু আমাকেই নিয়ে যাবে। কিন্তু আমাকে না পেলে যে ওদের ওপর মুহূর্তের বিলম্ব না করে পশুর দল ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর তাই প্রতি রাতে জিপের শব্দ পেলেই বুকের স্পন্দন বেড়ে গেলেও তৈরি হই দরজার ওপর সবুট লাথির জন্য: খোল দো, দরওয়াজা, খোল দো...।

বিদেহী আত্মার কথা বিফল হলো। ভবিষ্যৎ আমার ভালো নয়। ৭ সেপ্টেম্বর একাডেমিতে গিয়ে বসতেই সাদা পোশাক পরা দুটো পাঞ্জাবি পাষণ্ড এসে ঘরে ঢুকে আমার দুপাশে দাঁড়িয়ে বলল: আর ইউ সরদার ফজলুল করিম? আমি বললাম: হ্যাঁ। ওরা বলল, ইউ আর টেকেন ইনটু কাস্টডি— তোমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। বলেই প্রায় জোর করে অপেক্ষমাণ জিপে আমাকে তুলে নিয়ে বেদনাহত বন্ধুদের চোখের সুমুখ দিয়ে মুহূর্তে জিপটা বেরিয়ে এল বহু বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাংলা একাডেমির অফিস থেকে।

জিপের মধ্যে শূন্য চোখে বসে বসে নিজের মনের দিকে তাকাই। দেখি মন বলছে: বিদেহী আত্মার কথা তো মিথ্যা হলো না। ভূত-ভবিষ্যতের কথা হয়তো জানে এই বিদেহী আত্মারা। তাহলে মিথ্যা হবে না সেই বাণীও: স্বাধীন হবে বাংলাদেশ। আমার মৃত্যুর আশঙ্কা কিংবা মৃত্যু, সে তো আজ লাখো ঘটনার একটিমাত্র ঘটনা। কিন্তু ইতিহাসের চাকা কি বর্বর দস্যুর দল আমাদের হত্যা করে স্তব্ধ করতে পারবে? কোনো দস্যুর দলই কি পেরেছে কোনো দিন?

জিপটা এতক্ষণে শহরের রাস্তা ঘুরে ক্যান্টনমেন্টের পথ ধরেছে।