একজন রবি কবি

.

আমি কেমনে বনে বাহিরিব!’

কথাগুলো একটু ভেবে দেখো, ঘর ও বাইরের জীবন যে দুই রকম, তা স্পষ্ট হয়েছে দুই পাখির কাহিনিতে।

তোমাদের জন্য অসংখ্য লেখা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেননি তিনি। তোমরা যেগুলো বুঝতে পারো, সে ভাষাতেই লেখা।

কণিকা বলে এক অসামান্য সৃষ্টি আছে রবীন্দ্রনাথের। তাতে ছোট ছোট কবিতায় জীবনের সেরা সত্যগুলোকে তুলে ধরেছেন তিনি। তেমনই একটি:

‘ভিমরুলে মৌমাছিতে হল রেষারেষি,

দুজনায় মহাতর্ক শক্তি কার বেশি।

ভিমরুল কহে, আছে সহস্র প্রমাণ

তোমার দংশন নহে আমার সমান।

মধুকর নিরুত্তর ছলছল—আঁখি-

বনদেবী কহে তারে কানে কানে ডাকি,

কেন বাছা, নতশির! এ কথা নিশ্চিত

বিষে তুমি হার মানো, মধুতে যে জিত।’

রবীন্দ্রনাথের আরেকটি গল্প বলে তাঁর জন্মদিনের এই লেখাটা শেষ করব। ‘বলাই’ গল্পটা তো পড়েছ? গাছ বা প্রাণীদের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গিটা কেমন ছিল, তা জানা যায় ছোট্ট একটি ঘটনায়।

এদিন মৈত্রেয়ী দেবীর ছেলে মিঠু এসে উপস্থিত খানিকটা ছেঁড়া ফুল পাতা নিয়ে।

তা দেখে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘কি গো, তোমার বুদ্ধি-শুদ্ধি কিছু হয়নি? গাছের পাতা ছিঁড়লে যে ওদের ব্যথা লাগে, তা জানো?’

‘সত্যিই লাগে নাকি দাদু?’

‘আমি যখন ছোটো ছিলুম, এই ধর ১০/১২ বছর বয়স, তখন কাউকে গাছের পাতা ছিঁড়তে দেখলে ভারি কষ্ট পেতুম। অনেকের অভ্যাস আছে চলতে চলতে হঠাৎ এক মুঠো পাতা ছিঁড়ে নিল, আমার ভারি খারাপ লাগত দেখতে। মনের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠত। আরো খারাপ লাগত যদি কেউ পোকা কি কুকুর বেড়ালকে বিরক্ত করত, কষ্ট দিত। অসহায় প্রাণী, ওদের নির্বাক বেদনা মনে লাগে বড়।’

রবীন্দ্রনাথকে একটু হলেও তো বুঝতে পারলে? আরও বুঝতে হলে আরও আরও বেশি বেশি পড়তে হবে রবীন্দ্রনাথের বই। এখন তো ইন্টারনেটেই রবীন্দ্রনাথের সব বই পড়া যায়, তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি তোমরা নিজেরাই কিনে ফেলো রবীন্দ্র রচনাবলি। নিশ্চিত বলে দিতে পারি, বইগুলো কিনলে জিতবে তুমি। মধুতেই জিত!