সরকারের নানা ভর্তুকি ও সহায়তা সত্ত্বেও এ দেশের কৃষকদের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। কোনো জায়গায় সেচের পানির অভাবে জমি ফেটে যায়, কোনো জায়গায় জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসল। নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার কারণে বছরের পর বছর ধরে ভুগছিলেন কৃষকেরা। পাশে একটি খাল থাকলেও সেটি ভরাট ও দখল হয়ে যায়।
খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বহু দেনদরবার করলেও বারবার আশাহত হতে হয় তাঁদের। অবশেষে কৃষকেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে নেমে পড়েন খাল খননে। এর ফলে খালটি পুনর্জীবন পেল, ফসল হারানোর আশঙ্কাও দূর হলো।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কয়েক দশক আগে থেকে সেখানে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল ছিল। সেটি দিয়ে সাত-আটটি বিলের পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা স্থানে স্থানে পুকুর খনন করে খালটির প্রবাহ রুদ্ধ করে দেন। একসময় খালটি অস্তিত্ব হারালে আশপাশের ১৪ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। অল্প বৃষ্টিতেই পানি আটকে তলিয়ে যায় ফসলি জমি।
নষ্ট হয় খেতের পর খেতের ধান। আর বর্ষা এলে জলাবদ্ধ সৃষ্টি হয়ে চার মাস তলিয়ে থাকে জমিগুলো। আমন আবাদ বন্ধ থাকে তখন। দেড় হাজার হেক্টর জমি নিয়ে বছরের পর বছর ভুগছিলেন কয়েক হাজার চাষি।
এমন দুর্ভোগ থেকে অবসান পেতে মুক্তারপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান, চকতারতা গ্রামের আনারুল ইসলাম, কামাল হোসেনসহ আরও অনেকে এগিয়ে আসেন। তঁাদের সঙ্গে শামিল হন ইউপির চেয়ারম্যান সারওয়ার কামালও। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা স্বেচ্ছায় খাল খনন শুরু করেন। যখন যে গ্রামের পাশ দিয়ে খাল যাচ্ছে, সে গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে খননের কাজটি করে দিচ্ছেন। অধিকাংশ কৃষক ফসল রক্ষার স্বার্থে স্বেচ্ছায় জমি দিচ্ছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরের শেষ পর্যায়ে হওয়ায় কোনো প্রকল্প নেওয়া যাচ্ছিল না। তবে কৃষকেরা স্বেচ্ছায় এ কাজ পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন। এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
ভবিষ্যতে ওই সব মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এত বছরেও খালটি পুনরুদ্ধার করা গেল না কেন, সেই প্রশ্ন আমরা তাঁর কাছে রাখতে চাই। কৃষকেরা বলছেন, কোনো কোনো জায়গায় খালটি ছোট হওয়ায় সেটি যমুনা নদীতে মিলিত হতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
আশা করি, প্রশাসন সেদিকে নজর দেবে। কৃষকদের স্বেচ্ছায় পুনরুদ্ধার হওয়া খালটিকে পরবর্তী সময়ে দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসন থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমরা বক্তারপুরের উদ্যোগী কৃষকদের অভিবাদন জানাই।