সমঝোতার আহ্বানের পাশাপাশি আছে প্রচ্ছন্ন হুমকিও

খালেদা জিয়ার ভাষণ

বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংসদে বাজেট অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও নিজেদের ব্যর্থতার বিষয়টি আড়াল রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন। এক ঘণ্টা ৫৪ মিনিটের ভাষণে তিনি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট ছাড়াও দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন। 
বিরোধী দলের নেতার ভাষণের ইতিবাচক দিক হলো, অনির্দিষ্টভাবে হলেও ভুল কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো মানুষই ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু প্রশ্ন হলো ক্ষমতার বাইরে থেকে নেতা-নেত্রীরা এই ভুলের কথা স্বীকার করলেও ক্ষমতায় গিয়ে তাঁদের মধ্যে সেই ভুল সংশোধনের কোনো প্রয়াস লক্ষ করা যায় না।
বিরোধী দলের নেতা আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাসহ দেশের অনেক সমস্যাই তুলে ধরেছেন, সমঝোতার কথাও বলেছেন। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করার কথাও তাঁর ভাষণে আছে। এই বাধ্য করার মধ্যে একধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকিও আছে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে।
খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যেসব ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন, তা অসত্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো বিরোধী দলে থাকতে নেতারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে যান। বিরোধী দলের নেতা আজ সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন, সেসব তাঁর সময়েও যথারীতি দৃশ্যমান ছিল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও প্রকটভাবে।
বিরোধী দলের নেতা আস্থার সংকটের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার এ কথাও সত্য যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা জারি থাকতেও ২০০৭ সালে এক-এগারোর অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষমতার পালাবদল ঠেকানো যায়নি। অতএব, নির্বাচনকালীন সরকার-কাঠামো নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা জরুরি। আর সমঝোতার জন্য চাই সংলাপ।
বিরোধী দলের নেতা যে জাতীয় ঐক্যের সন্ধান করতে বলেছেন, তার সঙ্গে কেউই দ্বিমত করবেন না। তিনি জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের বিপরীতে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন। সেসব খুবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু তিনি যখন শান্তি ও ঐক্যের আহ্বানের পরই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের ধর্মদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন, তখন আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। বিরোধী দলের নেতাকে বুঝতে হবে যে, ধর্মকে অহেতুক রাজনীতিতে টেনে আনার ফল কখনোই মঙ্গলজনক হয় না।