চিঠিপত্র

বাংলাদেশে নগরায়ণ

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার ২৮ ভাগ লোক ছোট-বড় শহরে বাস করে। শহরে বাস করার তথা নগরায়ণের প্রবণতা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরায়ণের প্রবণতা খারাপ না। তবে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ভবিষ্যতে ক্ষতিকর হয়ে দঁাড়ায়। বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে নগরায়ণের প্রথম ধাক্কা গিয়ে লাগে কৃষি জমির ওপর। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মূল্যবান কৃষিজমির অকৃষি কাজের ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়। নগরায়ণের ফলে যাতে মূল্যবান কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকে নজর রাখা উচিত। শহর বিকেন্দ্রীকরণের প্রবণতা ভালো। আমাদের দেশে শহর বিকেন্দ্রীকরণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন। এসব উপজেলাকে গ্রোথ সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে দেশ অবশ্যই উপকৃত হতো।
কিন্তু এসব কর্মসূচিতে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যতটা সৎ ও আন্তরিক থাকার কথা, বাস্তবে তা থাকে না৷ ফলে বাস্তবায়নের পর্যায়ে এসে সংকটে পড়ে—এটাই মুশকিল। যে কারণে নতুন নতুন কৃষিজমি হ্রাস পাওয়া ছাড়া সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের এ ধরনের কর্মসূচি খুব একটা উপকারে আসে না। শহরে লোক স্থায়ী এবং অস্থায়ী দুভাবেই আসে। গ্রাম থেকে বা অন্য কোনো শহর থেকেও লোক আসে। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা-চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রয়োজনে যেমন শহরে আসে, তেমনি আবার গ্রামে বা তার নিজ শহরে সুবিধাবঞ্চিত হলে এবং বিকল্প সংস্থান করতে ব্যর্থ হলে বাধ্য হয়ে শহরে আসে।
বড় শহরের চাপ কমাতে ছোট শহরগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো আবশ্যক। কর্মজীবীদের জন্য অতিরিক্ত ভাতা, স্বল্প ভাড়ায় বাসস্থান, কম মূল্যে সর্বোত্তম নাগরিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা যায়। ছোট শহরে শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সহজ সুযোগ থাকলে এসব শহরে থাকার প্রবণতাও বেড়ে যাবে। ছোট শহরে অবস্থানের নিয়ামকগুলো অনুকূল হলে বড় শহরের ওপর চাপ যে কেবল কমবে তা নয়, সে সঙ্গে ছোট শহরগুলোও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। সহজ এবং সচ্ছল কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে দূরবর্তী বা বড় কোনো শহরে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে।অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে পরবর্তী সময়ে দূরবর্তী স্থান থেকে শহরের কর্মস্থলে আসাও দুরূহ হয়ে পড়ে। আমাদের এ সীমিত ভূমির ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সহনীয় পর্যায়ে আনতে পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই।

মোহাম্মদ আব্দুস সাদিক

অধ্যক্ষ, ডক্টর মালিকা কলেজ, ঢাকা৷