
ড. কাকন নাগ একাধারে জিন প্রকৌশলী, জৈবপ্রযুক্তিবিদ ও ওষুধপ্রযুক্তিবিদ। তিনি ‘লিন সিক্স সিগমা ব্ল্যাক বেল্ট’ সার্টিফায়েড প্রফেশনাল এবং আমেরিকান সোসাইটি ফর কোয়ালিটির ‘সার্টিফায়েড ফার্মাসিউটিক্যাল জিএমপি প্রফেশনাল’ ও ‘সার্টিফাইড কোয়ালিটি অডিটর’। ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকার মাধ্যমে দেশের মানুষ তাঁর নাম জানতে পারে। দেশের প্রথম বায়োলজিকস তাঁর ও তাঁর দলের গবেষণার ফল। ওষুধশিল্প নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল
জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর ওষুধের কথা নতুন করে শোনা যাচ্ছে। আমাদের দেশে তৈরিও হচ্ছে। বিষয়টি আসলে কী?
কাকন নাগ: জৈবপ্রযুক্তির ওষুধ বা বায়োলজিকস জীবন্ত কোষ বা জেনেটিক-ম্যাটেরিয়াল থেকে তৈরি ওষুধ। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনসুলিন হচ্ছে বায়োলজিকস। কোভিডের টিকাগুলোও বায়োলজিকসের উদাহরণ। বায়োলজিকসের প্রথম ওষুধ হচ্ছে ডিফথেরিয়া-টক্সয়েড, যেটা ১৮৮৮ সালে আবিষ্কার করা হয়েছিল। ১৯২২ সালে ইনসুলিন এসেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইউএস-এফডিএ) অনুমোদন পেয়েছে ১৯৮৩ সালে। এখন নতুন নতুন বায়োলজিকস আসছে।
নতুন এই প্রযুক্তির কথা সহজ করে কীভাবে বোঝানো যায়?
কাকন নাগ: এই ওষুধ তৈরিতে প্রয়োজন জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি। উদাহরণস্বরূপ, কিডনির রোগ ও রক্তস্বল্পতা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইরাইথ্রোপোয়েটিনের কথা বলা যায়। এটি একটি প্রোটিন হরমোন, যা প্রধানত কিডনি থেকে নিঃসৃত হয়। জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে মানুষের কিডনি কোষ থেকে ইরাইথ্রোপোয়েটিন উৎপাদনকারী জিন পৃথক করে বেশ কয়েকটি ধাপে ইরাইথ্রোপোয়েটিন উৎপাদনকারী কোষের ক্লোন (প্রতিলিপি) তৈরি করা হয়। এসব ক্লোনের সংখ্যা বহুগুণ বাড়িয়ে সবচেয়ে ভালো মানের ইরাইথ্রোপোয়েটিন উৎপাদনকারী ক্লোনের মজুত গড়া হয়।
পরের ধাপে জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লোনের মজুত সংরক্ষণ, পরিবর্ধন, নিয়ন্ত্রিত কালচার ও পরিশোধন করে ইরাইথ্রোপোয়েটিন উৎপাদন করা হয়। এভাবে ইরাইথ্রোপোয়েটিন বাংলাদেশে আমরাই প্রথম তৈরি করেছি, যা ‘জিবিপোয়েটিন’ নামে বাজারে আছে। দেশে তৈরি প্রথম বায়োলজিকস এটাই। বায়োলজিকসেরও ধরন আছে।
তা হলে বাজারে এখন মোটাদাগে দুই ধরনের ওষুধ আছে, এটা বলা যায়।
কাকন নাগ: হ্যাঁ, প্রচলিত ওষুধ আর নতুন এই বায়োলজিকস। প্রচলিত ওষুধ হলো কেমিক্যাল বা রাসায়নিক ওষুধ। কেমিক্যাল ওষুধের ইতিহাস বেশ পুরোনো, বায়োলজিকসের ইতিহাস অপেক্ষাকৃত নতুন। প্যারাসিটামল হচ্ছে কেমিক্যাল ওষুধের উদাহরণ। বায়োলজিকসের উদাহরণ ইনসুলিন।
■ মানুষের অসুখ হয়েছে কিন্তু চিকিৎসক রোগ ধরতে পারছেন না, এ ধরনের অজানা পরিস্থিতির অনেকটাই সমাধান করেছেন বিজ্ঞানীরা। ■ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের ওপর প্রখর দৃষ্টি রেখে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা আমাদের ওষুধশিল্পের জন্য অননুমেয় প্রতিকূলতা তৈরি করছে।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ আসলে কী? কেমিক্যাল ওষুধ বনাম বায়োলজিকস, নাকি অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ আছে?
কাকন নাগ: কেমিক্যাল ওষুধের বিকল্প হিসেবে বায়োলজিকস নিয়ে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ তো আছেই। প্রথম চ্যালেঞ্জ, বায়োলজিকসে আমরা কত দূর অগ্রসর হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করেছি বা করতে পারব। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, নতুন প্রজন্মের যে ওষুধ আসছে, সেগুলো নিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় আমরা কত দূর কী করতে পারব। আবার ট্রিপস ওয়েভার (নভেম্বর, ২০২৬) পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যেই আধুনিক ওষুধ কিনতে হবে। এটিই ভোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আধুনিক ওষুধ মানে কী? কোনটাকে আপনি আধুনিক ওষুধ বলছেন?
কাকন নাগ: ওষুধ অনুমোদনের ক্ষেত্রে দুটি শর্তপূরণ বাধ্যতামূলক। প্রথমত, ওষুধটি নিরাপদ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত কি না। দ্বিতীয়ত, রোগ সারাতে ওষুধটি কার্যকর কি না। আরেকটি বিষয়, এটি আগের যে ওষুধগুলো আছে, তার থেকে ভালো কি না বা জনগোষ্ঠীতে থাকা রোগগুলো চিকিৎসার জন্য এই ওষুধের বিকল্প আছে কি না। ‘আগের থেকে ভালো’ (বেটার) বা ‘এটা একমাত্র’ (অরফান) যুক্তিটি না থাকলে, এর প্রমাণ না থাকলে ‘নতুন ওষুধের’ অনুমোদন দুরূহ। এই নীতি মানা ওষুধই ‘আধুনিক ওষুধ’।
আগে শোনা যেত, মানুষের অসুখ হয়েছে কিন্তু চিকিৎসক রোগ ধরতে পারছেন না, এ ধরনের অজানা পরিস্থিতির অনেকটাই সমাধান করেছেন বিজ্ঞানীরা। রোগনির্ণয় সঠিকতর হচ্ছে। প্রশ্ন আসছে, রোগটি কি ভালো করা যাবে? এটি ভালো করার মতো ওষুধ কি বর্তমানে আছে?
উপযুক্ত ওষুধ না থাকলে প্রথমে দেখা হয় কোন ওষুধকে কী রি-পারপাস করা যায়। রি-পারপাস হচ্ছে, এটি যে রোগের জন্য অনুমোদন পেয়েছিল, ওষুধটি বাজারে আছে, চিকিৎসকেরা দিচ্ছেন, রোগীরা সেবা পাচ্ছেন, এই ওষুধই ভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে কি না? উদাহরণস্বরূপ, কোভিডের চিকিৎসায় বাংলাদেশে আইভারমেকটিন বহুল ব্যবহৃত হয়েছিল, এটি কোভিডের ওষুধ ছিল না। এভাবে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেন বর্তমান ওষুধের রি-পারপাস করে আরেকটি রোগ ভালো করা যায় কি না। সেটি না হলে নতুন ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলে। এর জন্য বিজ্ঞান দরকার, তা জানা-বোঝার ঘাটতি আছে আমাদের।
২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ ট্রিপসের সুযোগ আর পাবে না। তখন ধাক্কাটা ওষুধশিল্পের জন্য প্রচণ্ড হয়ে দেখা দেবে, নাকি নতুন জায়গা বা নতুন সুযোগ তৈরি হবে?
কাকন নাগ: নতুন পেটেন্টেড ওষুধ লাইসেন্স ছাড়া উৎপাদন-বিপণন সম্ভব নয়; না হলে পেটেন্ট লঙ্ঘন হবে, আন্তর্জাতিক আইনি বিরোধ, আমদানি-রপ্তানি বাধা, এমনকি নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তির ঝুঁকি তৈরি হবে।
যে ওষুধ বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে, সেটার পেটেন্ট থাকলেও হয়তো মার্কেটে থাকবে। সমস্যা হলো, পেটেন্টের অধীন আধুনিক বা নতুন যেসব ড্রাগ আসবে, সেগুলো তখন থেকে আমরা তৈরি করতে পারব না। তখন অধিকতর কার্যকর, অধিকতর নিরাপদ, সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে—এমন ওষুধ পাওয়া কষ্টসাধ্য হবে।
বাংলাদেশে কোনো কোম্পানির নতুন ওষুধ তৈরি করতে চাইলে মূল উৎপাদনকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে, তার জন্য টাকা দিতে হবে। কাঁচামাল ওই কোম্পানি থেকেই নিতে হবে। প্রতি ডোজের জন্য আবার রয়্যালটিও দিতে হবে। ওষুধটি কম দামে বা অঘোষিত উৎস থেকে এনে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। সরকারিভাবে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে মানবিক যুক্তিতে বাংলাদেশে স্পেশাল-ডিসকাউন্ট প্রাইসে ওষুধটি পাওয়া যেতে পারে।
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অনেক দেশ আগেই সতর্ক হয়েছে, ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা নিইনি। সমস্যা আরও আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের ওপর প্রখর দৃষ্টি রেখে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা আমাদের ওষুধশিল্পের জন্য অননুমেয় প্রতিকূলতা তৈরি করছে।
তবে ট্রিপস ওয়েভার বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগও। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আর অ্যান্ড ডি) মাধ্যমে নতুন ওষুধ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলে বিশ্ববাজারের সম্মান বাড়বে ও বাণিজ্যের দরজা খুলবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা করোনা টিকা আবিষ্কারের পর অনেক উন্নত দেশও আমাদের টিকা ও প্রযুক্তি কেনার প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছিল।
নতুন ওষুধ তৈরি বা উদ্ভাবনের জন্য কি গবেষণা হচ্ছে? আমরা কি করছি? আমাদের প্রক্রিয়াটি কী হওয়া উচিত?
কাকন নাগ: নতুন ওষুধের আর অ্যান্ড ডিতে সামগ্রিকভাবে বড় বিনিয়োগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন বিনিয়োগকারী কেন এই খাতে বিনিয়োগ করবেন? বাংলাদেশের প্রতিবেশ প্রচণ্ডভাবে আর অ্যান্ড ডির বিপক্ষে। আর অ্যান্ড ডিতে বড় বিনিয়োগের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাধা আসে দেশের ভেতর থেকে। এর উদাহরণ, কোভিড টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’।
বাস্তবতা হলো, আমাদের আর অ্যান্ড ডিতে বিনিয়োগ সীমিত, অনুমোদনপ্রক্রিয়া ধীর, টেকনোলজির পরনির্ভরতা, সরবরাহব্যবস্থায় (কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি) বিদেশনির্ভরতা বেশি। ফলে যাঁরা নতুন ওষুধ আনেন (যেমন আমরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংভিত্তিক প্রথম বায়োলজিকস এনেছি), তাঁরা পর্যাপ্ত স্বীকৃতি, দ্রুত অনুমোদন বা নীতিগত সুবিধা পান না, এটি গবেষকদের ও বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে।
যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁরা বাড়তি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে বিদেশ থেকে মানসম্মত প্রডাক্টের সঙ্গে নিম্নমানের প্রডাক্টও আসছে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ অপ্রতুল; থাকলে মানসম্মত ওষুধ বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সরবরাহ করা সম্ভব। তখন বাংলাদেশের যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ট্যালেন্ট অ্যাকুজিশন, নোভেল প্রডাক্ট ডেলিভারি—এসব জিনিস ভিন্নমাত্রায় পৌঁছাবে। অ্যাচিভমেন্ট দেখা যাবে। এখন তো অ্যাচিভমেন্ট দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ জ্ঞানের লোককেই এই দায়িত্ব দেওয়া উচিত, এই সুযোগ দেওয়া উচিত।
গবেষকদের বাস্তবে আর কোন কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে?
কাকন নাগ: গবেষণার জন্য মানসম্মত রি–এজেন্ট ও যন্ত্রপাতি সর্বোত্তম মানের কোম্পানি থেকে আমদানি করতে হয়। এসব কোম্পানির আঞ্চলিক কার্যালয় মূলত ভারত, দুবাই, হংকং বা সিঙ্গাপুরে। সরকারের এই নীতি নেই যে যদি তোমার প্রডাক্ট বিক্রি করতে হয়, থার্ড পার্টি বাদ দিয়ে বাংলাদেশে অফিস দিতে হবে। বাংলাদেশের লোককেই এজেন্ট দিতে হবে।
এতে দুটি সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, আমরা অহেতুক অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। তারা আমাদের দিতে না চাইলে আমরা পাই না। দ্বিতীয়ত, পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের আর অ্যান্ড ডি মারাত্মকভাবে অন্য একটি গেটের ভেতর আটকে যাচ্ছে, যার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। কাঁচামাল ও রিসোর্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকতেই হবে। যেমন একটা ছোট্ট সুইচ নষ্ট হলেও তাদের মাধ্যমেই আনতে হয়। এতে চলে যায় অনুৎপাদনশীল মাসের পর মাস, খরচও বেড়ে যায় বহুগুণ।
আবার শুরুর প্রসঙ্গে আসি। বায়োলজিকসের সম্ভাবনা বা বাজার কত বড়?
কাকন নাগ: শুধু ইউএস মার্কেটের ডেটা পাওয়া যায়, অন্য মার্কেটের ডেটাতে অস্পষ্টতা থাকে। তাতে দেখা যায়, আর্থিক দিক থেকে বাজারের ৪০ শতাংশ বায়োলজিকসের দখলে, ৬০ শতাংশ কেমিক্যাল ওষুধের। এই ৬০ শতাংশের বাজারে আছে ২০ হাজারের বেশি ওষুধ। আর ৪০ শতাংশ বাজারে অবদান রাখছে প্রায় ৩০টি ওষুধ।
গত দুই-তিন বছরের সেরা ১০ ব্লকবাস্টার ওষুধের তালিকায় কমপক্ষে ৬টিই ছিল বায়োলজিকস। ১০ বছর আগে নতুন অনুমোদিত ওষুধের ৩০ শতাংশ ছিল বায়োলজিকস। এখন ৫০ শতাংশ বা তার বেশি বায়োলজিকস। সুতরাং এটা পরিষ্কার, ওষুধের ধরন গভীরভাবে বদলে গেছে, বাজারও বদলে যাচ্ছে।
এর কারণ কী? কেন এমন হলো? বায়োলজিকসে কী এমন আছে?
কাকন নাগ: ‘স্মল-মলিকিউল ড্রাগ’ বা ‘রাসায়নিক ওষুধ’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘লিকি পারফরম্যান্স’ দেয়। ‘লিকি পারফরম্যান্স’ বলতে বোঝায় ‘অনিয়ন্ত্রিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’। যে জন্য ওষুধটি ব্যবহার করা হয়, তার পাশাপাশি অন্য কাজও করে। সে জন্যই ‘টক্সিসিটির’ কথা আসে।
কিন্তু বায়োলজিকস ওষুধ খুব সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে। এটা শারীরবৃত্তের উপযুক্ত ওষুধ। কারণ, এই ওষুধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বায়োলজিক্যাল সিস্টেমে পাওয়া যায়। ওষুধটি কোন মাত্রায় শরীরে ছড়িয়ে পড়বে, কীভাবে কাজ করবে ও মেটাবলিজম হবে, তা বিজ্ঞানীদের আগে থেকেই ধারণা থাকে। সুতরাং তার নিরাপদ মাত্রা কোনটা, তা বোঝা সহজ হয়। রাসায়নিক ওষুধের ক্ষেত্রে তা জানা কঠিন। তবে মাত্রা ছাড়ালে বায়োলজিকসেরও টক্সিসিটি আছে।
খুব সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কী করার আছে? সরকারসহ অন্য অংশীজনের জন্য সুপারিশ কী হতে পারে?
কাকন নাগ: ওষুধের নতুন ল্যান্ডস্কেপ তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। টিকা ও বায়োসিমিলার তৈরি করে আমরা তার প্রমাণ রেখেছি। কিন্তু আমাদের দেশে গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়ার চর্চা বা সংস্কৃতি নেই। এখানে পরিবর্তন আনতে হবে।
সরকার পরিবেশ তৈরি করতে পারলে এ–জাতীয় ওষুধ এখানেই বানানো সম্ভব। রাষ্ট্র ও সরকারি সংস্থাগুলো ছোটখাটো অজুহাতে যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। বিডা যে এপিআই ও ওষুধশিল্পে ট্যাক্স হলিডে ও ক্যাশ সাপোর্ট দিচ্ছে, তা বায়োলজিকস আর অ্যান্ড ডি ম্যানুফ্যাকচারিংয়েও তা প্রসারিত করা দরকার। মূল উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তির (লাইসেন্সিং, স্বেচ্ছা-লাইসেন্স, টেক-ট্রান্সফার, লোকালাইজড-ম্যানুফ্যাকচারিং) জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
সরবরাহ সিস্টেম সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ রি–এজেন্ট/মিডিয়া/কনজ্যুমেবলের লোকাল এজেন্ট বাধ্যতামূলক করা ও গুণ–মানহীন বা অননুমোদিত কাঁচামাল আমদানি বন্ধে শূন্যসহনশীল নীতি গ্রহণ করা দরকার। গবেষকদের জন্য গবেষণা ফান্ড এবং সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সরকারের তরফ থেকে স্বীকৃতির ঘাটতি আছে। ওষুধশিল্পের উচিত প্রায়োগিক গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঙ্গে নেওয়া। এখানেও সরকার ভূমিকা রাখতে পারে।
সুতরাং সরকার, রেগুলেটর, ইন্ডাস্ট্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়—চার পক্ষকে নিয়েই এখনই সময়বদ্ধ রোডম্যাপ দরকার। আমরা (দেশীয় গবেষকেরা) প্রমাণ করেছি, ওষুধের নতুন ল্যান্ডস্কেপ তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। এখন দরকার নীতি-অবকাঠামো-বিনিয়োগে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ। না হলে বাংলাদেশের বাজার-অংশীদারত্ব হারানোর ঝুঁকি থাকবে, ‘লাস্ট-মুভার ডিজঅ্যাডভান্টেজ’ তৈরি হবে।
সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
কাকন নাগ:প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।