নাগরিক কলাম

আসুন, বাংলা ভাষা শিখি

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি গেল। শহীদ মিনারে গেলে দেখতেন, মানুষ নির্বিকারভাবে জুতা নিয়ে সেখানে উঠে যাচ্ছে। মানে শহীদ মিনারের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাও আমরা প্রদর্শন করি না। দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে অবহেলা করি, অশুদ্ধ ভাষা লিখি এবং সে জন্য বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত বা লজ্জিত হই না।
কিন্তু পরিহাস এই যে নিজের অক্ষমতা বা ঔদাসীন্যজনিত অপরাধের বোঝা আমরা আমাদের মাতৃভাষার ওপরেই চাপিয়ে মনকে চোখ ঠারি। বাংলা নাকি ভারি কঠিন ভাষা, বানান নাকি ভয়ানক শক্ত ও ভজঘট! আমাদের জননীর মতো মাতৃভাষাও সর্বংসহা—সন্তানের দেওয়া এই অন্যায় অপবাদের বিরুদ্ধে সে কথা বলে না।
পৃথিবীতে আর কোনো দেশের লোক নিজের ভাষা সম্বন্ধে এমন অদ্ভুত ও অশ্রদ্ধেয় উক্তি করে? সত্য হলো: মাতৃভাষাও শুদ্ধভাবে বলতে ও লিখতে গেলে তা শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়—সব জাতিই তা করে। বাংলা ভাষা নির্ভুল লেখার প্রথম প্রতিবন্ধক সঠিক বানান না জানা। এ দেশে শিক্ষার অবমূল্যায়ন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ক্রমনিম্নগামী হওয়ায় মাতৃভাষা সম্বন্ধে সচেতনতাও আজ লুপ্তপ্রায়। আর বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা—এ যেন রূপকথা। এর ফলে বহু শিক্ষিত ব্যক্তিও নির্ভুল বানান ও ভাষার
শুদ্ধ প্রমিত প্রয়োগ জানেন না। দুর্বলতা থাকতে পারে, কিন্তু সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে, সেই চেষ্টাও আমাদের নেই বললেই চলে। আমরা ভুল বাংলা বলে বা লিখে আত্মপ্রসাদ বোধ করি, প্রমাদ গুনি না।
লেখক: নাগরিক, ঢাকা।