Thank you for trying Sticky AMP!!

নিজের ওপর কেন দেবত্ব আরোপ করছেন সি চিন পিং

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং

চীনের শীর্ষ নেতা সি চিন পিং তাঁর রাজনৈতিক পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৩৭৬ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ অধিবেশনে বিষয়টি উপস্থাপিত হবে। আশা করা হচ্ছে, অধিবেশনে সি চিন পিংয়ের পদমর্যাদার উত্তরণ ঘটবে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ঐতিহাসিক দুই নেতা মাও সে-তুং ও দেং জিয়াং পিংয়ের সমান মর্যাদা তিনি লাভ করবেন।

২০১২ সালে সি চিন পিং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ নেতা মনোনীত হন। এটা নিঃসন্দেহ যে নেতা হিসেবে সফলতায় তাঁকে নতুন এই স্বীকৃতির সামনে দাঁড় করিয়েছে। আমার একটা গভীর মূল্যায়ন হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট সির ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা নয়।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে পার্টি ও রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নেতা, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সিইওরা রয়েছেন। ষষ্ঠ অধিবেশনে সদস্যরা গত অক্টোবর মাসে পলিটব্যুরোর সদস্যদের গৃহীত প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন ও গ্রহণ করবেন। এবারের প্রস্তাবগুলোতেও আগের অধিবেশনগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে। এর বিষয়বস্তু পার্টির ইতিহাস এবং ১৯৪৫ ও ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত দুটি অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

১৯৪৫ সালে অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবটি পার্টি লাইন-সম্পর্কিত, মাও সে-তুং যেটাকে ‘বাম সুবিধাবাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৯৮১ সালের অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবটি চীনের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং সেটা সূচনা করতে গিয়ে মাও সে-তুং যেসব ভুল করেছিলেন, তার পর্যালোচনা।

২০২১ সালের অধিবেশনে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, তা আগের ওই দুই অধিবেশনের প্রস্তাবের ধরন থেকে নানা কারণেই ভিন্ন হবে। অতীতে পার্টির যে ভুল, সেটার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়ার বদলে এবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টি শত বছরের অর্জন উদ্‌যাপন করবে। এবারের অধিবেশনে সির উচ্চ প্রশংসা করা হবে। তিনি কেন চীনকে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত নেতা, সেটার ব্যাখ্যা করা হবে। স্পষ্টত, এটাই এবারের অধিবেশনের প্রধান উদ্দেশ্য। সব ঠিক থাকলে সি চিন পিং তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের জন্য চীনের শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ২০২৫ সালের বসন্তে পার্টির ২০তম কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে এ মেয়াদ শুরু হবে।

সির চরিত্রের যে অতিকর্তৃত্বপরায়ণতা, সেটা চীনের সক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে বিকাশ করার তাঁর যে প্রচেষ্টা, সেটারই বহিঃপ্রকাশ। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃষি থেকে ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে শহরের বড় কারখানাগুলোতে কাজে যুক্ত করা হয়েছে। চীনের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হলে এখন নতুন উদ্যোগে উৎসাহ দিতে হবে।

সি চিন পিংয়ের সগৌরব উপস্থিতি সত্ত্বেও চীনের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় লক্ষ্যগুলো অর্জনে তাঁর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমত, উইলিয়াম ওভারহল্টের মতো বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সির ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অতিপ্রচেষ্টা, শীর্ষ নেতা হিসেবে তাঁর যে আধিপত্য, সেটা যে নড়বড়ে, সেটারই প্রতিফলন। প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি অনেকগুলো কায়েমি গ্রুপের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে তাঁর অনেকগুলো প্রতিপক্ষ ও শত্রু তৈরি হয়েছে। নিজের ওপর দেবত্ব আরোপে সির যে প্রচেষ্টা, সেটা শুধু তাঁর অহম কিংবা উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়। তিনি যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন তাঁর নীতি ও অনুসারীদের সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায়ও এখানে রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সির চরিত্রের যে অতিকর্তৃত্বপরায়ণতা, সেটা চীনের সক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে বিকাশ করার তাঁর যে প্রচেষ্টা, সেটারই বহিঃপ্রকাশ। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃষি থেকে ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে শহরের বড় কারখানাগুলোতে কাজে যুক্ত করা হয়েছে। চীনের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হলে এখন নতুন উদ্যোগে উৎসাহ দিতে হবে। সির নেতৃত্বে চীন সরকার নতুন উদ্যোগ যাতে বিকশিত না হয়, সে জন্য কাজ করেছে। কর্মক্ষম জনশক্তিকে সময়ের অপচয় করে সরকারের প্রচারণা পড়ার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। আবার বেসরকারি খাতকে অনুদান দিতে বাধ্য করেছে।

সি মতাদর্শিক বিশুদ্ধতার ওপর জোর দিতে গিয়ে শিক্ষায়তন ও গণমাধ্যমে পার্টি লাইনের বাইরের যেকোনো মতকে দমন করেছেন। তিনি অর্থনীতিকে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসতে গিয়ে সম্পদের অপচয় বাড়িয়েছেন। যদিও পার্টি সির ওপর দায়িত্ব দিয়েছিল সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বাজারের ভূমিকাকে বিকশিত করার জন্য। কিন্তু তিনি বেসরকারি খাতের তুলনায় রাষ্ট্রীয় খাতের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছেন। এখন সি সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর দিকে বাঁক নিতে যাচ্ছেন। সেখানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা রাষ্ট্রের সেবা করবে। এর মাধ্যমে চীনের উদ্যোক্তা এবং তাদের সৃজনশীল ক্ষমতাকে নষ্ট করার ঝুঁকি তৈরি করছেন।

সি এবং তাঁর কমিউনিস্ট পার্টি লেনিনবাদের বৃত্তে এখনো বন্দী। চীনের জনগণের জীবনমান নাটকীয় উন্নয়নের পরও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের লক্ষ্য অর্জনে দেশটির জনগণের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে ভয় পায়। রাজনৈতিক আলোচনা কিংবা বহুদলীয় নির্বাচন দিতে তারা আত্মবিশ্বাসী নয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ অধিবেশনে সির শাসনকাল পোক্ত করার ঘটনা আমরা দেখব।

ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ, এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া

ডেনি রায় সিনিয়র ফেলো, ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টার