চাল কেনার লাইনে দাঁড়িয়েও হাসুন
আমরা আছি ডটকমের জগতে। আমাদের সবকিছুই কম কম। আমাদের বাতি আছে, বিদ্যুৎ কম; পকেট আছে, টাকা কম; ব্যাংক আছে, ফরেন রিজার্ভ কম; পেট আছে, খাবার কম; সাধ আছে, সাধ্য কম! আমরা আছি অর্থনৈতিক মন্দার কালে। আমরা আছি দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর লড়াইয়ের মধ্যে।
এ অবস্থায় আমাদের মন স্বভাবতই খারাপ থাকবে। কিন্তু মন খারাপ করে আমরা পরিস্থিতি বদলাতে পারব না। বরং রক্তচাপ বেড়ে যাবে, রক্তে শর্করা বাড়বে; ডায়াবেটিস হবে; তখন আবার ডাক্তারের কাছে যাও রে, এই টেস্ট, ওই টেস্ট; গুচ্ছের টাকা যাবে বেরিয়ে। আর সে ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি! ‘অ্যান অ্যাপেল আ ডে, কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে’।
দিনে একটা করে আপেল খেয়ে ডাক্তারকে দূরে রাখতে পারি। কিন্তু আপেল বিদেশি ফল, এলসি খোলা যাচ্ছে না; আপেল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই সহজতম পথ হলো হাসা। হাসি হলো শ্রেষ্ঠ ওষুধ। লাফটার ইজ দ্য বেস্ট মেডিসিন।
কৌতুক শুনুন।
একজন ঋণখেলাপি ব্যাংক লুটেরা টাকা পাচারকারী বাংলাদেশের গ্রাম দেখতে তাঁর রেঞ্জ রোভার গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন আঁকাবাঁকা পথে। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন, এক নারী পথের ধারে ঘাস খাচ্ছেন।
ধনকুবের গাড়ি থামালেন। বললেন, ‘বুড়িমা, আপনি ঘাস খাচ্ছেন কেন?’
‘বাবা। আমার পেটে খিদা। আর কোনো খাবার নাই। পেটের জ্বালায় ঘাস খাচ্ছি।’
ধনকুবের বললেন, ‘আপনি আমার গাড়িতে উঠুন। আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করব।’
নারী বললেন, ‘আমার দুই ছেলে, তাদের বউ, নাতি-নাতনি; ওরাও খেতে পায় না।’
ধনকুবের বললেন, ‘ওরাও কি ঘাস খাচ্ছে?’
‘জি বাবা।’
‘তাহলে ওদেরও আমার গাড়িতে উঠতে বলুন।’
ঠাসাঠাসি-গাদাগাদি করে উঠল সবাই। বড়লোক তাঁর প্রাসাদের ভেতর গাড়ি ঢোকালেন।
তারপর সবাইকে নামিয়ে বললেন, ‘দেখুন, আমার লনের ঘাসগুলো কত বড় হয়ে গেছে। আপনারা নিশ্চিন্ত মনে খেতে থাকুন।’
এই কৌতুকটা বেশি নিষ্ঠুর হয়ে গেল? আপনার কি মনে হয় না, আমরা এর চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর! আপনি জানেন, এখন বাজার থেকে ডলার কিনে নিজের ড্রয়ারে রেখে দিলে দেশের ক্ষতি, আপনি যদি তা সত্ত্বেও ডলার কিনে রাখেন, আপনি কি এই ধনকুবেরের চেয়ে উত্তম কেউ? আপনার গোডাউন ভরা কাগজ, কিন্তু আপনি বাজারে ছাড়ছেন না, কারণ আরও দাম বাড়বে! এবং আপনি যখন শুনছেন আমাদের দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে হবে, তখন আপনি আপনার অবৈধভাবে অর্জিত টাকা ডলার করে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, সময়-সুযোগমতো দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন বলে। আপনি কি এই গল্পের ধনকুবেরের চেয়ে নিজেকে উত্তম ভাবছেন?
আচ্ছা, এবার একটা হালকা কৌতুক। এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটা কলেজের ধারে বাসা নিলেন। কলেজের ছাত্ররা রোজ সকালে কলেজে যাওয়ার পথে বাড়ির সামনের ডাস্টবিনগুলোর গায়ে বাড়ি মারে। শব্দ হয়। ছেলেদের নিষেধ করলে তো তারা শুনবে না। মুরব্বি তখন ছেলেদের বললেন, ‘বাবারা, তোমরা যা করছ, আমাদের ছাত্রজীবনে আমরাও তা-ই করতাম।
তোমরা এক কাজ করো। রোজ বিনগুলোকে বাড়ি মারবে। আমি তোমাদের প্রত্যককে রোজ এক ডলার করে দেব।’ ছেলেরা পরম উৎসাহে বিনে আঘাত করতে করতে কলেজে যায়। এক সপ্তাহ পর তিনি বললেন, ‘বাবা, দেশে মন্দা চলছে। আমি এক ডলার দিতে পারব না। আধা ডলার দেব।’ ছেলেরা রাগ করল। কিন্তু মন্দার কথা তো আর মিথ্যা নয়। তারা মেনে নিল। এক সপ্তাহ পর মুরব্বি বললেন, ‘বাবা, ৫০ সেন্ট করেও দিতে পারব না। ২৫ সেন্ট পাবে।’ শুনে ছেলেরা বলল, ‘এত সস্তার কাজ আমরা করি না। তারা আর পথের ধারের বিনগুলোয় আঘাত করে না।’
এরপরের কৌতুকটা পাচ্ছি কৌতুকের অনলাইন সাইটে। কিন্তু এটা কৌতুক, নাকি সিরিয়াস গল্প, তা বুঝতে পারছি না। ১৭৯৩ সাল। জানুয়ারি মাসের শুরু দিকে। সম্রাট ষোড়শ লুই ভার্সাই প্রাসাদে। বাইরে বিক্ষুব্ধ জনতার রুদ্ররোষ। সম্রাট নির্বিকার। তিনি তাঁর প্রিয় দরজি পইলোঁকে নিয়ে এসেছেন তাঁর ঘরে। পইলোঁ নতুন পোশাক পরাচ্ছে সম্রাটকে।
সম্রাট বললেন, ‘পইলোঁ, জুতা জোড়া সুন্দর হয়েছে। কী বলো! হীরা বসানোর ফলে জুতা জোড়া মানানসই হয়ে উঠেছে।’
পইলোঁ বলল, ‘জাহাঁপনা, বাইরে জনতা আপনার প্রাসাদের প্রাচীর ভেঙে ফেলছে।’
‘গর্দভ! আমাকে পোশাক পরিয়ে দাও। না হলে আমি তোমার গর্দান নেব।’
‘অবশ্যই। অবশ্যই। এই নিন। হাত দুটো বাড়ান। আমি আপনার স্যুটটা পরিয়ে দিই।’
‘মুক্তাখচিত স্যুটটা ভালো হয়েছে বলো!’
‘জাহাঁপনা। বাইরে গোলার আওয়াজ। পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওরা প্রাসাদে ঢুকে পড়েছে।’
‘আহাম্মক! আমাকে হাতমোজা পরিয়ে দাও। এই চামড়া খুবই দামি।’
‘তা দিচ্ছি। কিন্তু ইয়োর ম্যাজেস্টি, দরজা ভেঙে ফেলল। কৃষকেরা এখন এই ঘরেই ঢুকে পড়তে যাচ্ছে।’
‘আমার হাতমোজা দাও। তা না হলে আমি এই তরবারি দিয়ে তোমার মাথা কেটে ফেলব।’
দরজার ছিটকিনি ভেঙে গেল। কৃষক মিলিশিয়ারা এসে ঢুকে পড়ল সম্রাটের কক্ষে। এক কৃষক চিৎকার করে উঠল, ‘এই রকম দামি পোশাক! এই পোশাক দিয়ে দুটো গ্রামের সব মানুষ তিন মাস খেতে পারত!’ এরপর ক্ষুব্ধ সশস্ত্র কৃষক তাকাল দরজি পইলোঁর দিকে। ‘তুমি কি এই পোশাক ডিজাইন করেছ?’
পইলোঁ বিপদে পড়ল। একদিকে রাজা তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতমোজা না পরালে তিনি তার গলা কাটবেন। আর কৃষক বিদ্রোহীরাও তাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত। পইলোঁ সম্রাটের হাতে মোজা পরানোর কাজটাকেই বেছে নিল।
এই ঘটনা সত্য কি না জানি না।
কম দামে চাল বিক্রি হচ্ছে ট্রাকে। তার সামনে দীর্ঘ লাইন। মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। দাঁড়ান, ভাই ও বোনেরা লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু মন খারাপ করবেন না। হাসুন। হাসলে ওষুধের টাকা বেঁচে যাবে।
না হলে এই খবর পড়ুন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবু কায়সার মিন্টু দক্ষিণ কোরিয়াফেরত। দক্ষিণ কোরিয়ার চার কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা টাঙিয়েছেন বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করে। এর খরচ জোগাড় করতে তিনি সঞ্চয় ভাঙিয়েছেন এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।
আনিসুল হক কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক
আরও পড়ুন
-
বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ, সাইফউদ্দিন
-
যৌন কেলেঙ্কারিতে বিপাকে বিজেপি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাতি জেডিএস থেকে বহিষ্কার
-
চোখ মেলছেন নিবিড়, ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনার অপেক্ষায় কুমার বিশ্বজিৎ
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে আপিল করছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানি কমতে পারে ৫.৫ থেকে ১৪%: এডিবি