Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজায় ইসরায়েলের নিষ্ঠুর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মধ্যপ্রাচ্যের তরুণেরা

২০২৪ সাল যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিতে পারে

ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও মর্মান্তিক মানবিক বিপর্যয়ের কারণে এ বছর মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অশান্ত ও ঘটনাবহুল বছর ছিল।

২০২৩ সালের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনার সময় মধ্যপ্রাচ্যের জন্য পরবর্তী বছর কী বয়ে আনতে পারে, তা বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত বছরের পুরোটা সময়জুড়ে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু বড় রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। সৌদি-ইরান চুক্তি হয়েছে। আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘটনার মতো ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব নিরসনের এবং এই অঞ্চলের পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের সম্ভাবনাকে বাড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

গত এপ্রিলে সুদানে বেজে ওঠা যুদ্ধের ডামাডোল আর অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি গাজায় ইসরায়েলের চালানো বর্বর অভিযানের সাক্ষী হয়ে থাকছে ২০২৩ সাল।

এ ছাড়া প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও আমাদের ঝাঁকুনি দিয়েছে। বিশেষত লিবিয়ার দেরনা বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং তুরস্ক, সিরিয়া ও মরক্কোয় ভূমিকম্পের আঘাতে ৫৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি সবাইকে হতবিহ্বল করেছে।

Also Read: গাজা যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যবস্থা বদলের ইঙ্গিত

এই প্রধান বিপর্যয়কর ঘটনাগুলোর কোনোটির কথাই আগেভাগে কারও পক্ষে বলা সম্ভব ছিল না। তারপরও এই ঘটনাগুলো এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের পথযাত্রাকে নির্দেশ করছে। মনে করা হচ্ছে, ২০২৪ সাল মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রাকে উল্লেখযোগ্যভাবে নতুন আদল দিতে পারে।

প্রথমত, গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযানের কারণে ২০২৪ সালের শুরুর দিকেই মধ্যপ্রাচ্য নিজেকে ঢেলে সাজানোর কাজে মন দিতে পারে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান আরও কয়েক মাস প্রলম্বিত হতে পারে। তার মানে গাজা আরও চুরমার হতে বাকি আছে। এমনকি যদি গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতি হয়ও, তাহলেও গাজার নিরাপত্তা ও প্রশাসন ইস্যু অমীমাংসিত থেকে যাবে এবং এটি ওই অঞ্চলের প্রধান ইস্যু হয়ে ঝুলে থাকবে।

বিশেষ করে গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠন ইস্যুতে আরব দেশগুলো এবং পশ্চিমা দাতাদেশগুলোর মধ্যে এই নিয়ে মতভিন্নতা তৈরি হতে পারে। পশ্চিমা দাতারা এর আগে গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠনে বেশ কয়েক দফা সহায়তা দিয়েছিল। তারা অবশ্যম্ভাবীভাবে আরও একবার গাজায় অর্থ ঢালবে কি না, তা নিয়ে বড় দ্বিধায় পড়বে।

ভূমিকম্পে সিরিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় ঘটার পর জাতিসংঘ যেভাবে যথার্থ প্রতিক্রিয়া দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, গাজায় তার ঠিক একই ভূমিকা দেখা গেছে। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের সমস্যা সমাধানে নিজেদের একটি সংস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দিনকে দিন বাড়ছে।

ইসরায়েলের বর্বর হামলা সব ধরনের মানবিক বোধকে পদদলিত করেছে। এটি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের তরুণ প্রজন্ম সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ হয়েছে। যথার্থ প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় আরব দেশগুলোর প্রতি তারা যে ক্রুদ্ধ, তা নিয়ে চলতি বছরের দোহা ফোরামে আলোচিত হয়েছে।

এই তরুণদের ক্ষোভকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এই ক্ষুব্ধ তরুণেরা গোটা অঞ্চলের সামাজিক-রাজনৈতিক চিত্র আমূল বদলে দিতে পারে। ফলে আরব দেশগুলোকে বাধ্য হয়েই তাদের ইসরায়েল নীতিকে ঢেলে সাজানোর কথা ভাবতে হতে পারে। বিশেষ করে মিসর ও জর্ডানের মতো যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার আছে, সেসব দেশের সরকার জনতুষ্টিবাদের কারণেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিরোধিতা শুরু করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ২০২৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে জাতিসংঘ চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে এখানে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

Also Read: গাজা যুদ্ধ শেষে যে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্ম হবে

ভূমিকম্পে সিরিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় ঘটার পর জাতিসংঘ যেভাবে যথার্থ প্রতিক্রিয়া দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, গাজায় তার ঠিক একই ভূমিকা দেখা গেছে। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের সমস্যা সমাধানে নিজেদের একটি সংস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দিনকে দিন বাড়ছে।

তৃতীয়ত, গাজা যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব ২০২৪ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার (মেনা) অঞ্চলে পড়তে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ইতিমধ্যেই মেনা অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অবনমনের পথে থাকা এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইয়েমেন, সিরিয়া ও সুদানে চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।

নিজেদের আঞ্চলিক সমস্যা নিজেদের সমাধান করতে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের নিজেদের তেলনির্ভরতা কমাতে হবে। এ বিষয়ে তারা ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়েছে। তাদের যৌথ উদ্যোগ অতি দ্রুত মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে।

  • সানসোম মিল্টন কাতারের দোহায় সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান স্টাডিজের একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো

  • মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত