মতামত

মধ্যবিত্ত: পেটে খিদে মুখে লজ্জা

আমরা কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত। ফাইভ–জি নিয়ে ব্যস্ত। আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। হরেক রকমের উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এই ব্যস্ততার মধ্যে অতিসাধারণ মানুষের ভীষণ যন্ত্রণার কথা বেমালুম এড়িয়ে যাচ্ছি। যন্ত্রণা তো অনেক রকমের আছে। তবে সে যন্ত্রণা সহ্য করার মতো নয়। সেটা এড়িয়ে যাওয়াটা কতটা উচিত?

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া দাম। পেট্রল-গ্যাস-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়, তবে এগুলোর মজুত ক্রমাগত কমছে। চাল, ডাল, তেল, নুন তো দেশে উৎপাদন হচ্ছে, আমদানিও হচ্ছে। তবে খাদ্যশস্যের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই কেন?
দিন এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলোর যে কী নিদারুণ হাল, তার খবর কেউ রাখছে কি?
মানুষ কিছু খাক বা না খাক, ভাত বা রুটি তার প্রয়োজনই। ৫০-৬০ টাকার নিচে এক কেজি চাল পাওয়া যায় না। একটু ভালো মানের চাল ৮০–৯০ টাকা। গম থেকে হয় আটা, আর এই আটার চাহিদার বেশির ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাহলে প্রশ্ন, এ দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি বিভাগ করেটা কী?

একবার ভাবুন। সবকিছু প্রয়োজনের তুলনায় কম করে বাজার করা যায় কিন্তু সংসারে চাল, আটা, ডাল, নুন, তেল কম কীভাবে নেওয়া যায়?

ওষুধপত্রের দাম বাদ দিলাম। দুমুঠো ভাতের জন্য আজ হাহাকার। যারা নিম্নবিত্ত পর্যায়ের, তাদের তো রেশনে চাল দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই। মাঝেমধ্যে হঠাৎ হঠাৎ ট্রাক আসে, সেখানে গিয়ে চাল সংগ্রহ করতে হয় যৎসামান্য কম দামে।

তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের যে কী সমস্যা তা বলে বোঝানো যায় না। তারা না ট্রাকের চাল নেওয়ার লাইনে দাঁড়াতে পারে, না ঋণ করে খেয়ে শোধ করতে পারে। আবার সরকারি সুযোগ ভোগ করতেও মধ্যবিত্তের সম্মানে বাধে। এককথায় পেটে খিদে মুখে লজ্জা।

সবজির বাজারে আগুন। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। অন্যান্য সবজি দামে পিছিয়ে নেই, বরং এগিয়ে। কিন্তু সেই সবজির দামের লভ্যাংশ কি চাষি পাচ্ছে?
সবজি দিয়ে নিত্য আহার করাও বর্তমানে কঠিন। কিন্তু কৃষির দেশ বাংলাদেশে এমনটা কেন হবে? এ লজ্জা রাখি কোথায়? আবার কিনা বড় মুখে বলা হয়, ‘কৃষির দেশ বাংলাদেশ’।

একদল ব্যবসায়ী মুনাফার জন্য অসাধু উপায় অবলম্বনে ব্যস্ত।
কিন্তু মধ্যবিত্তরা আজ বড় অসহায়। অর্থনৈতিক অবনতিতে সবচয়ে ক্লিষ্ট হয় তারা। মুখে বলার জো নেই। স্বপ্নের পক্ষিরাজের ডানায় ভর করে মিথ্যে জীবন যাপন করে চলতে হয়। তাদের যন্ত্রণা বুঝবে কে?
অবশেষে বলতে হয়, ‘কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে, দংশেনি যারে।’

লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা