Thank you for trying Sticky AMP!!

গেলাসের অর্ধেক ভরা ছিল, এখন গেলাসটা কই

আপনি একজন আশাবাদী মানুষ। গেলাসের অর্ধেকটা ভরা আর অর্ধেকটা খালি থাকলে আপনি বলেন, অর্ধেকটায় পানি, বাকিটায় বাতাস। আর পুরোটা খালি হলে আপনি বলেন, বাহ্‌, একটা গেলাস প্রস্তুত, এটা এখন আমরা যেকোনো ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারব।

যেকোনো সংকটের মধ্যেও আপনি খুঁজে বের করেন ঘটনার কোনো একটা ভালো দিক। গুলি খেয়ে মানুষ মরে গেলেও আপনি বলেন, যাক, চোখটা তো বেঁচেছে! দেশে আলুর দাম বেড়ে গেছে। আপনি ভাবছেন, যাক, পচা আলু নিক্ষেপের ঘটনা তো ঘটবে না। ডিমের দাম বেড়ে গেলে আপনি হাঁপ ছাড়েন, আচ্ছা, তাহলে সেদ্ধ ডিম থেরাপির ঘটনা কমবে। পেঁয়াজের দাম বাড়লে আপনার ভাবনায় আসে, গোপাল ভাঁড় আর বলতে পারবেন না, ছেলে ভালো, তবে দোষ একটাই, শুধু পেঁয়াজ খায়।

Also Read: মেয়র, আপনার ফাঁপর কোথায়!

আপনার মতো আশাবাদী মানুষ কিন্তু কোনো দুর্ঘটনার খবরও বলবেন আস্তে আস্তে। আমার ইনবক্সে একটা কৌতুক এসেছে। এটা আগে বলে নিই।

সরকারের একজন মুখপাত্র বললেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া দেশের সব খবরই ভালো। দেশের মানুষ পরম সুখে আছে। অর্থমন্ত্রী নিশ্চিন্তে আছেন, তাঁর ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে, এত ভালো চলছে দেশ যে, তাঁকে অফিসও করতে হয় না। বাইডেনের সঙ্গে সেলফি উঠে গেছে, শুধু তা-ই নয়, এখন আমেরিকার রাজধানীতে চলছে বাইডেনের সঙ্গে নৈশভোজ। দেশে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, এলসি খোলা যাচ্ছে না, অভিবাসী শ্রমিকেরা বিদেশ যাবেন, দুটো ডলার কেনার জন্য হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, আলু-পেঁয়াজ-ডিমের দাম গেছে বেড়ে, তাতে কী, এসবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

এরই মধ্যে ব্যাংক থেকে আজগুবি ঋণ, বন্ধ কারখানার জন্য ঋণ, ঠিকানাবিহীন বেনামা প্রতিষ্ঠানকে শত শত কোটি টাকা ঋণ দেওয়া চলছে। চলছে, চলবে, চলছে, চলবে...আসলে এ কটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই কটা ছাড়া দেশ ভালো আছে, মানুষ সুখে আছে।

Also Read: কচ্ছপ ও খরগোশের গল্পটির শেষে আর যা যা ঘটেছিল

এই কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশ ভালো আছে নিয়ে কৌতুকটা হলো:
কলকাতায় চাকরি করেন বাঙালি বাবু। থাকেন মেসে। বাড়ি গ্রামে। মাঝেমধ্যে বাড়ি যান। মাসে-দুই মাসে এক-আধবার। তো মাঝখানে বাবু বাড়ি যেতে পারেননি। বাড়ি থেকে লোক চলে এসেছে কলকাতার মেসে।
বাবু বললেন, কী রে? তুই এত সকাল সকাল। সারা রাত জার্নি করে এসেছিস, ব্যাপার কী? খবর ভালো তো?
বার্তাবাহক বলল, হ্যাঁ বাবু। কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া খবর সব ভালো।
কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? কী বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
‘তেমন কিছু নয় বাবু। ঘাবড়াবেন না। কোদালটা ভোঁতা হয়ে গেছে।’
‘কোদাল ভোঁতা হয়েছে? কীভাবে?’
‘আপনার প্রিয় ঘোড়াটাকে আপনি বলেছিলেন মারা গেলে মাটিতে পুঁততে। তা ঘোড়াটা মরে গেল। আমি কোদাল নিয়ে চললাম পাথুরে জমিতে। গর্ত খুঁড়তে। গেল ভেঙে কোদাল।’
‘কিন্তু ঘোড়াটা স্বাস্থ্যবান ছিল। বয়সও তেমন নয়। মরল কী করে?’
‘আরে আপনার প্রিয় ফজলি আমের গাছটা ওর ওপরে পড়ল যে!’
‘সে কী! কীভাবে?’
‘ওই যে আমি আমগাছটা কুড়াল দিয়ে কাটতে গেলাম।’
‘তুই আমার প্রিয় আমগাছ কাটবি কেন?’
‘আপনার মা যে বলে রেখেছেন, তিনি মারা গেলে আগুন যেন ওই আমগাছের কাঠ দিয়েই হয়!’
‘মা আর নেই! কী বলিস। কী হয়েছিল!’
‘নাতির শোক সামলাতে পারবেন কী করে। কত আদরের নাতি ছিল তার!’
‘কী বলিস। আমার বুকের মানিক আর নেই!’
‘কী করে বাঁচবে বলুন। দুগ্ধপোষ্য শিশু। মায়ের দুধ বিনা কি বাঁচতে পারে!’
‘মানে! কী বলছিস।’
‘হ্যাঁ। কী বলব! বউদি তো জমিদারের মাতাল ছেলেটার হাত ধরে ভেগে গেছে! দুধের শিশুটাকে কেউ এইভাবে ফেলে রেখে চলে যেতে পারে। সাত গ্রামে ঢিঢি পড়ে গেছে!’

Also Read: এ দেশের বিদূষকেরাই এখন শ্রেষ্ঠ

এবার আমি আশাবাদের খবরটা দিই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫। আর মূল্যস্ফীতি কমবে। এ বছর মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৬ দশমিক ৬-এ নেমে আসতে পারে, গত অর্থবছরে যা ছিল ৯ শতাংশ। এই পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবির নতুন ডেভেলপমেন্ট আউটলুক।

এই আশার কথায় আপনার মতো আশাবাদী মানুষও কি আশা দেখছেন? দেশের মানুষ কষ্টে আছে, দেশে ডলারে আক্রা, ব্যাংক খালি করে ফাঁপা বানানো হচ্ছে, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে কাতারে কাতারে, এবং বাজারে স্যালাইন নেই; এর মধ্যে কি আপনি কোনো আশার কথা বলতে পারছেন!

হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, এখন প্রকৃত আশাবাদীর পক্ষে আর কিছুই করার নেই, কেবল হতাশ হওয়া ছাড়া। আপনিও কি তা-ই বলবেন!
আশাবাদী বলবেন, গ্লাসটার অর্ধেক ভরা।
হতাশাবাদী বলবেন, গ্লাসটার অর্ধেক খালি।
বিশ্লেষক বলবেন, অর্ধেকটা নিয়ে গেছে ঋণখেলাপিরা, বাকিটা নিয়ে যাবে লুটেরারা।
পাবলিক কোনো গেলাস দেখে না। তস্কর গেলাসটুকুনও নিয়ে ভেগে গেছে। জনগণ হাঁ করে আকাশের মেঘ খুঁজছে, কখন বৃষ্টি আসবে।
কবি বলেছেন, মেঘ দেখে তোরা করিস নে ভয়, ভেতরে তার বৃষ্টি আছে।

  • আনিসুল হক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক