ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান। মানবজীবনে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তি ইসলামের উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি মহান আল্লাহ, যিনি তাঁর রাসুল (সা.)-কে পাঠিয়েছেন সঠিক পথনির্দেশ ও সত্যধর্মসহ, যাতে তিনি তা সব ধর্ম–মতাদর্শ ও জীবনব্যবস্থার ওপর বিজয়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন; যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা ফাৎহ: ৪৮, আয়াত: ২৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর প্রতি ভালোবাসা ইমানের পূর্ণতার শর্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নবী!) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তবে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩, আয়াত: ৩১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষ থেকে প্রিয় হব।’ (বুখারি: ১৩-১৪)
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, ‘হে বৎস! যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তুমি এভাবে সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে, যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো হিংসা–বিদ্বেষ না থাকে; তবে তা-ই করো।’ তিনি আমাকে আরও বললেন, ‘হে বৎস! এটাই আমার সুন্নত আদর্শ, যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে, সে আমাকেই ভালোবাসে; যে আমাকে ভালোবাসবে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ (মুসলিম: ২৭২৬)
মহানবী (সা.)–এর সুন্নতের অনুসরণ তাঁর ভালোবাসার নিদর্শন, আনুগত্যেই ভালোবাসার প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দিয়েছেন, তা ধারণ করো এবং যার বিষয়ে তিনি বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)
মহানবী (সা.)–এর সুন্নতের অনুসরণ তাঁর ভালোবাসার নিদর্শন, আনুগত্যেই ভালোবাসার প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দিয়েছেন, তা ধারণ করো এবং যার বিষয়ে তিনি বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আমরা নবীজি (সা.)–এর সঙ্গে ছিলাম। নবীজি (সা.) হজরত উমর (রা.)–এর হাত ধরে ছিলেন। হঠাৎ উমর (রা.) বলে উঠলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জীবন ব্যতীত।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘না উমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় না হই।’ পরক্ষণেই উমর (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ এখন তা হয়েছে; আল্লাহর শপথ! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জীবনের চেয়েও প্রিয়।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ উমর! এখন (তোমার ইমান পরিপূর্ণ) হয়েছে।’ (বুখারি: ৬৬৩২)
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ইমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। প্রথম হলো যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) সবচেয়ে প্রিয় হবে।’ (মুসলিম: ৬৭)। ইমান ও আমলে উৎকর্ষ লাভের উপায় এবং আখিরাতে মহা সাফল্য অর্জনের সহায় প্রিয় নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসা। প্রত্যেক মুমিনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য হলো আখিরাতে রাসুল (সা.)–এর সান্নিধ্য লাভ করা। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলে করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে হবে?’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কি কিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছ?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)–কে ভালোবাসি।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গেই তার হাশর হবে।’ (মুসলিম: ২৬৪০)
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল নবী করিম (সা.)–এর এই উক্তি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)–কে ভালোবাসি, আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)–কেও ভালোবাসি; যদিও আমি তাঁদের মতো আমল আমি করতে পারিনি।’ (মুসলিম: ২৬৩৯)
দরুদ শরিফ পাঠ করা নবীপ্রেমের অন্যতম অনুষঙ্গ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি বিশেষ রহমত নাজিল করেন, ফেরেশতাগণ নবীর জন্য বিশেষ রহমতের দোয়া করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং বিশেষভাবে সালাম পেশ করো।’ (সুরা আহযাব: ৩৩, আয়াত: ৫৬)
‘আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আলাইহি।’
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com