যুক্তরাষ্ট্র আবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে ভেটো দিল। এ নিয়ে তৃতীয়বার নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিল।
সর্বশেষ সিদ্ধান্তের পক্ষে পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন সায় দেয়, একজন (যুক্তরাজ্য) ভোট দানে বিরত থাকে, আর যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়। যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প প্রস্তাব দেয় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য। সেটাও এই খোঁড়া যুক্তিতে যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে গাজায় বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে পারবে। ভাবখানা এই যে শুধু গাজায় বন্দী ইসরায়েলিরা যুদ্ধবিরতির অন্তরায়।
নিরাপত্তা পরিষদের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র আরেকবার প্রমাণিত করল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে কত গভীরভাবে জড়িত। অথচ আপাতবিরোধী বক্তব্যের পর বক্তব্যতে যুক্তরাষ্ট্র গত দুই মাসে পৃথিবীকে বোঝাতে চাচ্ছে যে তারা ইসরায়েলকে গাজায় সংবরণ করতে বলেছে, বলেছে গাজায় যেন বেসামরিক জনসাধারণকে সামরিক হামলার বাইরে রাখা হয়। যদিও এটা বুঝতে কারও বিশেষ বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না যে যুদ্ধবিরতি না হলে গাজার বেসামরিক মানুষ বাঁচতে পারবে না।
গাজার যুদ্ধ ফেব্রুয়ারিতে ১২০ দিনের সীমা অতিক্রম করেছে। এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত গাজায় ৩০ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে এবং ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০–এর বেশি লোক মারা গেছে। ইসরায়েলিরা মারা যায় ৭ অক্টোবর যখন হামাস ইসরায়েলি বসতিতে আক্রমণ করে।
এরপর শুরু হয় ইসরায়েলের প্রত্যাঘাত, যা এখনো চলছে। ইসরায়েল প্রথম পাল্টা আক্রমণ করে গাজার উত্তর দিকে। কারণ, তাদের মতে গাজার উত্তরে হামাস সেনার ঘাঁটি ছিল।
প্রথমে তারা উত্তরে আক্রমণ করে গাজার উত্তর এলাকার বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বলে। এর ফলে উত্তর গাজার প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা দক্ষিণ দিকে ধাবিত হয়। ইসরায়েলি সেনারা হামাস সৈন্যদের নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়ে একের পর এক ভবন, এমনকি হাসপাতালও ভেঙে দেয়।
১৪১ বর্গমাইলের (দৈর্ঘ্যে ২৫ মাইল এবং প্রস্থে ৩.৭ থেকে ৫.৭ মাইল) ক্ষুদ্র উপত্যকায় ইসরায়েলিরা আক্রমণ করে শত শত ভবন ধ্বংস করেছে; প্রায় ২৩ লাখ লোককে আশ্রয়হীন করেছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু।
১৯৪৮ সালের প্রথম ফিলিস্তিন যুদ্ধের পর গাজার এই ক্ষুদ্র উপত্যকায় পালিয়ে আসে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি, যা আজ বেড়ে হয়েছে ২৩ লাখ। ১৯৪৮ থেকে এই ছোট্ট উপত্যকা বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়েছে।
প্রথম যুদ্ধের পরে মিসরীয় নিয়ন্ত্রণে, ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকটের পরে ইসরায়েলের অধীনে। পরে আবার গাজা ১৯৫৭ সালে মিসরের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় চাপের মুখে ইসরায়েলের গাজা দখল শেষ করার পরে।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর ইসরায়েল পুনরায় গাজা দখল করে এবং ১৯৬৯ সালে মিসরীয় ইসরায়েলি শান্তিচুক্তির পর আবারও গাজা ছেড়ে যায়। এভাবে গাজা পিংপং বলের মতো হাতবদল হতে থাকে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রথম ২০ বছর।
মিসরীয় নিয়ন্ত্রণে বা ইসরায়েলের অধীনে থাকুক না কেন, গাজার জনগণ কখনোই সত্যিকার অর্থে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কারণ, ১৯৯৪ সালের অসলো চুক্তির আগপর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কখনোই ইসরায়েল দ্বারা স্বীকৃত ছিল না।
অসলো চুক্তিতে ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে তাদের দখলকৃত জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং গাজার ওপর কর্তৃত্ব ধাপে ধাপে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। তবে এই চুক্তি কার্যত ছিল একটি ভাঁওতা। কারণ, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যাকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর এবং গাজার সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল; কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ পায় পশ্চিম তীরের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এবং গাজা উপত্যকা। পশ্চিম তীরের বাকি সত্তর ভাগ ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণ করত পরোক্ষভাবে।
অসলো চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিম তীরে সব ইসরায়েলি বসতি তুলে নেওয়া আর নতুন বসতির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা না মেনে পুরোনো বসতি ভেঙে ফেলা দূরের কথা, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের নতুন বসতি বানাতে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি।
এবার আসা যাক গাজার কথায়। যদিও ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে গাজায় তার দখলদারির অবসান ঘটিয়েছিল, কিন্তু পশ্চিম তীরের সঙ্গে দূরত্বের কারণে এবং মাঝখানে ইসরায়েল ভূমি থাকার জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গাজার বাসিন্দাদের জন্য কোনো নাগরিক সুবিধা দিতে পারেনি।
এমন এক পরিস্থিতি ছিল, যেখানে ইসরায়েল গাজাকে তিন দিকে বেষ্টিত করার ওপর মিসরের স্থলপথ নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রিপ থেকে মানুষের চলাচল কার্যত কঠিন করে তুলেছিল। ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়া গাজার কোনো নাগরিক ইসরায়েলে কিংবা মিসরে যেতে পারত না।
গাজায় খাদ্য, পণ্য ও ওষুধ সরবরাহের জন্য ইসরায়েল বা মিসরের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। কারণ, সমুদ্রপথগুলো ইসরায়েলের দ্বারা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। এটি বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছিল, যার তিন দিকে ছিল ইসরায়েলের প্রাচীর।
সবে গাজা শাসনের কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজার জনগণকে খাওয়াতে এবং যত্ন নিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাজার সরকার দখলকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক শাখা ফাতাহর বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এরই মধ্যে মিসরে শিকড় গড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক সন্তান হামাস, মূলত গাজার সংগ্রামী দরিদ্র মানুষের মধ্যে তাদের মানবিক কাজ দিয়ে গাজায় নিজেকে খুব জনপ্রিয় করে তোলে। ২০০৭ সালের নির্বাচনে হামাস ফাতাহকে পরাজিত করে গাজায় সরকার গঠন করে। এর পর থেকে তারা ক্ষমতায় রয়েছে।
এটা বলা হয়ে থাকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি কর্তৃত্বকে দুর্বল করার জন্য তহবিল দিয়ে হামাসকে গোপনে উৎসাহিত করেছিলেন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস একটি দুর্বল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনোই তাদের দাবি পূরণ করতে পারবে না।
এটা সত্য হোক বা না হোক, হামাস শুধু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক শাখা ফাতাহর ভয়ংকর শত্রু হয়ে ওঠেনি, বরং অল্প সময়ের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক ভয়ংকর শক্তিতে পরিণত হয়েছিল।
২০০৮ সালে গাজার ওপর অব্যাহত দমনপীড়ন, পণ্য ও মানুষের চলাচল সীমিত করার প্রতিবাদে ইসরায়েলে হামাস বেশ কয়েকটি রকেট হামলা চালিয়েছিল। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালায়। ২২ দিনের যুদ্ধে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি এবং ১৩ জন ইসরায়েলি নিহত হন। ফিলিস্তিনিদের শত শত বাড়িঘর ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়।
২০১৪ সালে হামাস কর্তৃক কিছু ইসরায়েলি সেনাকে অপহরণ করার পর ইসরায়েল দ্বিতীয় গাজা যুদ্ধ শুরু করে, যার ফলে কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আগ্রাসনের পর ইসরায়েলি কিবুটজের দেয়াল ও ব্যারিকেড ভেঙে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে।
ইসরায়েলি প্রতিশোধ হয় দ্রুত, কিন্তু গভীর পরিকল্পিত ও নৃশংস। তাদের উদ্দেশ্য শুধু হামাসকে নির্মূল করা নয়, বরং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা; যাতে গাজার ২৩ লাখ লোক গাজা ছেড়ে চলে যায়। ফলে এখন ৩০ হাজার লোক মারা গেছে এবং উত্তর গাজার তিন-চতুর্থাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন গৃহহীন। আশঙ্কা হচ্ছে, এ ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে ছয় মাসের মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যাবে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সন্দেহজনক ভূমিকা পালন করে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক ও অর্থদাতা, যা দেশে ও বিদেশে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা জোরদার করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সৎ দালালের ভূমিকায় থাকার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ওপর লৌহকঠিন নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ইসরায়েলকে বাধা দেয়নি।
পশ্চিম তীর ও গাজার ওপর পূর্ণ সার্বভৌমত্ব থাকবে এমন ফিলিস্তিনকে ইসরায়েল কখনোই মেনে নেবে না, আর তার সমর্থন যুক্তরাষ্ট্র দিতে বাধ্য থাকবে যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ইসরায়েলের পেছনে আছে।
ইসরায়েলের পাশে নিজস্ব সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না। কারণ, এটি ওই অঞ্চলে একটি সমান্তরাল রাষ্ট্র তৈরি করবে, যা ইসরায়েলকে দুর্বল করতে পারে। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুর্বল ইসরায়েলকে সমর্থন করবেন না। কোনো মার্কিন কংগ্রেস এটা সমর্থন করবে না, অন্তত আগামী দুই দশকের মধ্যে তো নয়ই।
আমি আগামী দুই দশকের কথা বলছি। কারণ, ইসরায়েল পছন্দ করুক বা না করুক এবং আমেরিকার কংগ্রেস বা প্রেসিডেন্ট সত্যিকারের সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়ে যে মনোভাব পরিবর্তন করুক বা না করুক, ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা সৃষ্ট এই পঁচাত্তর বছরের সংকটের বিবর্তনীয় সমাধানের জন্য পরিবর্তনের বাতাস ইতিমধ্যে জড়ো হচ্ছে। আরও এক প্রজন্ম লেগে যেতে পারে, কিন্তু এটা ঘটবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা রয়েছে এবং কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল তার ফিলিস্তিনি/আরব জনগণের সঙ্গে ভয়াবহ আচরণ তারা দেখে আসছে। গাজা এবং পশ্চিম তীরের মানবেতর পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও বেশিসংখ্যক লোক জানে এবং প্রতিদিন সেখানকার নৃশংসতা দেখছে, তারা আরও বেশি করে শান্তির আহ্বান জানাচ্ছে, যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ন্যায়সংগত। ওই এলাকার আরব দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ দেখালেও নিজ নিজ দেশের জনগণ তাদের শাসকদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষেই বেশি সম্পৃক্ত।
পাশবিক শক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর শাসন অব্যাহত রাখার জন্য ইসরায়েলকে এসব বাস্তবতার হিসাব–নিকাশ করতে হবে শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেসের ওপর নির্ভর করে নয়।
ইসরায়েলের জন্য বাস্তবতা হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণ, যারা ওই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। সেখানে ৭০ লাখ ফিলিস্তিনি (পশ্চিম তীরে ৩০ লাখ, গাজায় ২০ লাখ এবং খোদ ইসরায়েলে ২০ লাখ) যেখানে ইসরায়েলে ৭০ লাখ ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি (বার্ষিক প্রায় ২ শতাংশ বনাম ইহুদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ) এই বৃদ্ধির হার বজায় থাকলে দুই দশকের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা সংখ্যায় ইসরায়েলিদের ছাড়িয়ে যাবে।
এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ইসরায়েল কোথায় বিতাড়িত করবে? জর্ডান বা মিসর নয়। উপসাগরীয় আরব বা সৌদি আরব কখনোই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দেবে না। ফিলিস্তিনিদের এ ভূখণ্ডের মধ্যে স্থান দিতে হবে এবং নাগরিক হিসেবে পূর্ণ সম্মান ও অধিকার দিতে হবে। এ অধিকারগুলো তাদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পর হবে নাকি পূর্ণ নাগরিক হিসেবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে থেকে হবে, তা ইসরায়েলি নেতাদের সিদ্ধান্ত। ক্ষয়ক্ষতির যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এখন থেকে তাদের এ বিবেচনা করতে হবে।
পূর্ণ সার্বভৌমত্বের সঙ্গে পুরো পশ্চিম তীর এবং গাজা নিয়ে গঠিত একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এমন একটি আদর্শ, যা প্রত্যেক ফিলিস্তিনি চায়। এর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে আট দশক ধরে চলা মানবসৃষ্ট সংকটের অবসান ঘটতে পারে। মুসলিম বিশ্ব থেকে উদ্ভূত বেশির ভাগ অস্থিরতার এখন একটিই মূল কারণ, ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক দখল ও উচ্ছেদ। ১৯৪৮ সাল থেকে এ অঞ্চলে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে এবং আরও একটি আসন্ন।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আরব দেশগুলো বা পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান খোঁজার খুব একটা আগ্রহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র দালাল হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তার উদ্দেশ্যগুলো সন্দেহজনক হয়ে ওঠে যখন তার কংগ্রেস থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য নির্লজ্জ সমর্থন পাশাপাশি উচ্চারিত হতে থাকে। এ দ্বিমুখী আচরণ এ প্রচেষ্টাকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য কি কোনো আশা আছে? এখন যে অন্ধকার ও বিষণ্ন সম্ভাবনা বিরাজ করছে, তাতে সংশয়ের কারণ রয়েছে। তবে এ লেখায় আগেই বলেছি, পরিবর্তনের হাওয়া আসতে বাধ্য। নতুন প্রজন্ম এ মানসিকতা পরিবর্তন করবে, যা দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অর্ধেক মানুষকে দমন করার জন্য ইসরায়েলের আত্মঘাতী অভিপ্রায় পরিচালিত করেছে। এভাবে চিরকাল চলবে না।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা