ট্রাম্পকে জেলে পুরতে হবে এখনই, নয়তো কখনোই নয়

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি : রয়টার্স

মেরিক গারল্যান্ড একজন কাপুরুষ। ইতিহাস এবং আইনের শাসন যখন তাঁকে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে তাগাদা দিচ্ছে, তখন আমরা তাঁকে তা না করে পিঠটান দিতে দেখলাম।

আরও জঘন্য ব্যাপার হলো, তিনি গত বছরের শুরুতে আমেরিকার প্রধান আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ার সময় যে শপথ নিয়েছিলেন, তার সঙ্গে তিনি সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। তিনি ডান হাত তুলে ধরে ‘সব দেশি–বিদেশি শত্রুর’ হাত থেকে মার্কিন সংবিধানকে ‘রক্ষা করার’ শপথ নিয়েছিলেন।

গারল্যান্ড তাঁর শপথ তো রাখেনইনি, উল্টো এমন একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের পক্ষে কাজ করেছেন, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নির্লজ্জভাবে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ‘শত্রু’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় আইন ভেঙে স্পর্শকাতর সরকারি নথি সরিয়ে তাঁর ফ্লোরিডার বাগানবাড়িতে রেখেছিলেন বলে সরকারি তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

মামলাটি অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডের পরিচালনা করার কথা। কিন্তু তিনি অন্য কোনো জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন—এমনটা দাবি করে এই মামলা পরিচালনার জন্য একজন বিশেষ কৌঁসুলি (স্পেশাল কাউন্সেল) নিয়োগ করেছেন। তবে বলা হচ্ছে, গারল্যান্ড ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না বলেই বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করেছেন। এটিকে তাঁরা ‘কাপুরুষোচিত’ বলে মনে করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পাবলিক ইন্টেগ্রিটি বিভাগের সাবেক প্রধান জ্যাক স্মিথকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে গারল্যান্ড অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বিচার বিভাগের হাজারো কর্মচারীকে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বন্ধুর জন্য এক নিয়ম, শত্রুর জন্য আরেক নিয়ম; ক্ষমতাবানদের জন্য এক আইন, ক্ষমতাহীনদের জন্য অন্য আইন; ধনীদের জন্য এক কানুন, গরিবদের জন্য অন্য কানুন; এটি থাকবে না। আমরা সবাই কথা ও কাজের মাধ্যমে দেখাব, আমেরিকার বিচার বিভাগ সাম্যের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার অনুসরণ করে এবং আইনের শাসন মেনে চলে।’

কিন্তু বাস্তবতা হলো গারল্যান্ড তাঁর কাজের মাধ্যমে আবার প্রমাণ করেছেন, ধনী ও ক্ষমতাবানদের জন্য এক নিয়ম এবং দরিদ্র ও ক্ষমতাহীনদের জন্য অন্য নিয়ম।

আপনি–আমি জানি, আজ যদি একজন দরিদ্র এবং ক্ষমতাহীন আমেরিকান নাগরিক একটি অভ্যুত্থানকে প্ররোচিত করার সঙ্গে জড়িত থাকতেন কিংবা তাঁর বাড়িতে সরকারি গোপন নথির বস্তা পাওয়া যেত, তাহলে বিচার বিভাগের ভয়ংকর হাতুড়ি কী ভীষণ দ্রুততায় এবং কঠোরতার সঙ্গে তার ওপর পড়ত। গারল্যান্ড তাঁর এই দ্বিমুখী আচরণের কথা স্মিথকে নিয়োগ দেওয়ার বিবৃতিতে স্বীকার করে নিয়েছেনও।

বাস্তবতা হলো, ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং তিনি আমেরিকার ক্ষীণ গণতন্ত্রের ইতিমধ্যে ছিঁড়েখুঁড়ে যাওয়া পোশাকের জন্য একটি ভয়ংকর বিপদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কয়েদি ট্রাম্প পর্যায়ে নামিয়ে আনার সময় এসেছে। এবং সেটা এখনই, নয়তো কখনোই নয়।

তিনি সেখানে বলেছেন, ‘কিছু অসাধারণ ক্ষেত্রে, স্বাধীনভাবে তদন্ত এবং মামলা পরিচালনা করার জন্য জনস্বার্থে একজন বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ করা দরকার।’ তিনি এই মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ট্রাম্পকে যে উপহারটি দিয়েছেন, তা ট্রাম্পের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। সেটি হলো সময়।

ট্রাম্প এখন গারল্যান্ডের কাছ থেকে ‘উপহার’ হিসেবে পাওয়া অতিরিক্ত মাসগুলো এই কথা প্রচার করার কাজে ব্যয় করার সুযোগ পাবেন যে তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত শক্তির রোষের শিকার হচ্ছেন যারা তাঁকে ‘আমেরিকাকে আবার মহান করা’র কাজে বাধা দেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে আছে।

স্মিথের তদন্ত নতুন বছরে শুরু হতে পারে এটি ট্রাম্পকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে যথেষ্ট শক্তি জোগাবে। মিডিয়া রিপোর্টে স্মিথকে একজন দৃঢ়চেতা, অভিজ্ঞ কৌঁসুলি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, যিনি অনেক অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। আমি মনে করি, এটি আমাদের মধ্যে যাঁরা ট্রাম্পকে কাঠগড়ায় দেখতে আগ্রহী, তাঁদের আশ্বস্ত করবে।

আমার নৈরাশ্যবাদী চিন্তাপ্রসূত মন কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হলেও আমি এখনো আশা করি ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হবে। কিন্তু যদি সেই মহিমান্বিত দিনটি আসে, তা হবে অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য বিরক্তিকর। সেদিন সেই অর্জনকে গারল্যান্ডের নতু কৌঁসুলি নিয়োগের ‘সঠিক সিদ্ধান্তের’ ফল হিসেবে উদ্‌যাপন করে তাঁকে বাহবা দেওয়া মোটেও উচিত হবে না।

বাস্তবতা হলো, ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং তিনি আমেরিকার ক্ষীণ গণতন্ত্রের ইতিমধ্যে ছিঁড়েখুঁড়ে যাওয়া পোশাকের জন্য একটি ভয়ংকর বিপদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কয়েদি ট্রাম্প পর্যায়ে নামিয়ে আনার সময় এসেছে। এবং সেটা এখনই, নয়তো কখনোই নয়।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

  • অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা আল–জাজিরার টরন্টোভিত্তিক কলাম লেখক