জান্নাতি মানুষের পরিচয়

দুনিয়া মানুষের জন্য একটি পরীক্ষার স্থান। মৃত্যুর পর মানুষ তার ভালো বা মন্দ কাজের ফল পাবে। যারা আল্লাহ, রাসুল ও আখিরাতে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে, তারা চিরস্থায়ী জান্নাত পাবে। (সুরা নিসা, আয়াত: ১২৪)। আর যারা অবিশ্বাস করে ও খারাপ কাজ করে, তারা জাহান্নামে যাবে। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৭২)।

আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘যে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখে ও ভালো কাজ করে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় এবং সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা তলাক, আয়াত: ১১)।

‘যে তার রবের সামনে হাজির হওয়াকে ভয় করে এবং খারাপ ইচ্ছা থেকে দূরে থাকে, তার বাসস্থান হবে জান্নাত।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০-৪১)। ‘যারা তাদের রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে, তাদের জন্য দুটি জান্নাত আছে।’ (সুরা রহমান, আয়াত: ৪৬)। ‘যারা ক্ষমা চায়...তারা নাজাত পাবে ও জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৬)। ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে যাও, তাঁর সন্তুষ্টি নিয়ে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে প্রবেশ করো, আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা ফজর, আয়াত: ২৭-৩০)।

দুনিয়া মানুষের জন্য একটি পরীক্ষার স্থান। মৃত্যুর পর মানুষ তার ভালো বা মন্দ কাজের ফল পাবে। যারা আল্লাহ, রাসুল ও আখিরাতে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে, তারা চিরস্থায়ী জান্নাত পাবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের মানুষ জান্নাতি হবে—ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী ও ভালো কাজ করা শাসক; দয়ালু, আত্মীয়স্বজন ও মুসলিমদের প্রতি কোমল হৃদয় ব্যক্তি; পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যারা অন্যের কাছে কিছু চায় না এবং ভালো স্বভাবের মানুষ।’ (মুসলিম: ২৮৬৫ ও ৭০৯৯)। ‘প্রত্যেক ভদ্র ও নম্র ব্যক্তি জান্নাতি।’ (বুখারি: ৪৯১৮ ও মুসলিম)।

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি লোকদের সম্পর্কে বলব না? তাঁরা হলেন নবীগণ, সত্যবাদীগণ, শহীদগণ, জান্নাতের শিশু (যারা ছোটবেলায় মারা গেছে) এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে। আর তোমাদের মধ্যে সেই নারীরাও জান্নাতি, যারা স্বামীর প্রতি খুব ভালোবাসা রাখে, সন্তান জন্ম দেয় এবং ভুল করলে বারবার স্বামীর কাছে ফিরে আসে। যখন স্বামী রাগ করে, তখন সে তার হাত ধরে বলে, “আপনি খুশি না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না।”’ (নাসায়ি: ৯১৩৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সাত ধরনের মানুষকে কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। তাঁরা হলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক; সেই যুবক, যাঁর যৌবন আল্লাহর ইবাদতে কাটে; যে ব্যক্তির মন সব সময় মসজিদের দিকে থাকে; সেই দুই ব্যক্তি, যাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসেন এবং এই ভালোবাসার মধ্যেই মারা যান; যে ব্যক্তি কোনো সুন্দরী নারীর প্রলোভনে পড়েন কিন্তু বলেন, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’; যে ব্যক্তি গোপনে দান করেন এমনভাবে যে তাঁর ডান হাত যা দেয়, বাঁ হাতও তা জানতে পারে না এবং যে ব্যক্তি একাকী আল্লাহকে স্মরণ করেন এবং তাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরে।’ (বুখারি: ৬৬০, মুসলিম: ১০৩১, তিরমিজি: ২৩৯১, নাসায়ি: ৫৩৮০)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘শিগগিরই তোমরা জান্নাতি ও জাহান্নামি মানুষকে আলাদা করে চিনতে পারবে।’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কীভাবে চিনব?’ তিনি বললেন, ‘ভালো ও মন্দ কথার মাধ্যমে। কারণ তোমরা পৃথিবীতে একে অপরের সাক্ষী হবে।’ (ইবনে মাজা: ৩৪১৯)।

একবার একটি জানাজার পর মানুষ মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে।’ পরে আরেকটি জানাজা এলে মানুষ তাঁর সমালোচনা করছিল। তিনি বললেন, ‘এটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে।’

হজরত ওমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী নিশ্চিত হয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যাঁর প্রশংসা করা হয়েছে, তাঁর জান্নাত নিশ্চিত। আর যাঁর সমালোচনা করা হয়েছে, তাঁর জাহান্নাম নিশ্চিত। তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।’ (বুখারি: ১৩৬৭)।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com