ইসলামের বিধান প্রকৃতির অনুকূল ও যৌক্তিক, সেই সঙ্গে সহজ, সুন্দর ও সাবলীল। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, সাবালক সব মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য রমজানের পূর্ণ মাস রোজা পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের যারা এ (রমজান) মাস পাবে, তারা যেন তাতে রোজা পালন করে। আর তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তবে অন্য সময়ে তা এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের প্রতি কঠিন করতে চান না; যাতে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
‘আল্লাহ কোনো সত্তাকে তার সামর্থ্যের অধিক দায়িত্বভার চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)
মানুষ কখনো এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে, যাতে তার পক্ষে রোজা রাখা কঠিন হয় অথবা কেউ যদি সফরে বা ভ্রমণরত থাকে এবং যারা রোজা পালনে সক্ষম নয় তাদের জন্য ইসলামি শরিয়তে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। মাজুর বা অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ছাড়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আর যাদের রোজা পালনের সক্ষমতা নেই, তারা এর পরিবর্তে ফিদিয়া দেবে (প্রতি রোজার জন্য) একজন মিসকিনকে (এক দিনের নিজের) খাবার দেবে। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে (অধিক দান), তবে তা তার জন্য অতি উত্তম। আর যদি তোমরা রোজা রাখো, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
সফরে বা ভ্রমণে বেশি কষ্ট হলে বা ইচ্ছা করলে রোজা ছাড়া যায়। এই রোজা পরে সুবিধামতো নিকটতম সময়ে কাজা আদায় করে নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক রমজানে রোজা অবস্থায় মক্কা শরিফের পথে যাত্রা করলেন। কাদিদ নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি রোজা ছেড়ে দিলে লোকেরা সবাই রোজা ছেড়ে দিলেন। (বুখারি: ১৮২০)
অনুরূপ মুসাফির বা ভ্রমণকারীর জন্য নামাজেও ছাড় রয়েছে। চার রাকাত ফরজ নামাজগুলো কসর অর্থাৎ দুই রাকাত আদায় করবেন। তখন সুন্নতগুলো নফলের পর্যায়ে চলে যাবে। তবে আদায় করলে সুন্নতের সওয়াব পাবেন।
ফিদিয়া শব্দের অর্থ বিনিময়, মূল্য, বিকল্প বা স্থলাভিষিক্ত; সম্মানজনক প্রতিদান ইত্যাদি। পরিভাষায় ফিদিয়া হলো রোজা পালনে অক্ষম ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে যা দান করেন। বার্ধক্যের কারণে বা অসুস্থতা অথবা অন্য যেকোনো কারণে রোজা পালনে অক্ষম বা অসমর্থ হলে এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে বা সক্ষমতা ফিরে পেয়ে রোজার কাজা আদায় করার মতো সম্ভাবনা না থাকলে, প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ ফিদিয়া প্রদান করবেন।
ফিদিয়া প্রদান করার পর যদি পরবর্তী রমজানের পূর্বে ওই ব্যক্তি রোজা পালনে সক্ষমতা লাভ করেন, তবে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করতে হবে। ফিদিয়া দেওয়া রোজার কাজা কোনোভাবেই পরের রমজানে বা তার পরবর্তী সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
জাকাত ও সদকার হকদারদের ফিদিয়া প্রদান করা যায়। এক দিনের ফিদিয়া একাধিক ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দেওয়া যাবে, আবার একাধিক দিনের ফিদিয়া এক ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে। একাধিক দিনের রোজার ফিদিয়া একত্রেও আদায় করা যায় এবং অগ্রিমও প্রদান করা যায়। একাধিক ব্যক্তির ফিদিয়া এক ব্যক্তিকে প্রদান করা যাবে।
ফিদিয়া হলো রোজার ক্ষমতায় তার পরিবর্তে আর্থিক দান বা সদকা। একজনের রোজা আরেকজন রাখতে পারে না, ফিদিয়া রোজার পরিবর্তে রোজা নয়; তাই যাকে ফিদিয়া দেওয়া হলো তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়, যেমন: নাবালেগ মিসকিন শিশু বা অতি বৃদ্ধ দুর্বল অক্ষম অসুস্থ অসহায় গরিব ব্যক্তি, যিনি নিজেও রোজা পালনে অক্ষম।
ফিদিয়ার পরিমাণ হলো একেকটি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ। ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘সদকাতুল ফিতর হলো ‘এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্যদ্রব্য। আবুসায়ীদ খুদরী (রা.) বলেন, ‘আমাদের খাদ্য-খাবার ছিল খেজুর, কিশমিশ, পনির, যব।’ (বুখারি) ফিদিয়া ও সদকা পণ্যদ্রব্য দিয়েও আদায় করা যায় এবং এর মূল্য দ্বারাও আদায় করা যায়। তবে গ্রহীতার জন্য যেটা বেশি উপকারী, তা দ্বারা আদায় করা শ্রেয়।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম