চিঠিপত্র

শিক্ষাপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: শিক্ষার্থীদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, সেই প্রভাব এসেছে শিক্ষা উপকরণেও। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি পণ্যের ওপর। বই, খাতা, কাগজসহ সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। সমাজের উচ্চবিত্তদের ওপর প্রভাব না পড়লেও শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের মধ্যে।

কুষ্টিয়া শহরে শিক্ষা উপকরণের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের খাতার দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে বইয়ের দামও। কাগজের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ফটোকপির দোকানেও। আগে যেখানে প্রতি পেজ ফটোকপি এক টাকা রাখা হতো, এখন সেখানে দুই টাকা পেজ রাখা হয়। স্টেশনারি ও শিক্ষা উপকরণ বিক্রির দোকানগুলোয় ৪০ টাকার ব্যবহারিক খাতা এখন ৫০ টাকা, ৬০ টাকার খাতা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কালার পেপার রিম ৩২০ থেকে বেড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনি ফাইল প্রতিটি ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে। কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মার্কার পেন প্রতি পিস ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। সাধারণ ক্যালকুলেটর ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
৭০ টাকার জ্যামিতি বক্স হয়েছে ৮০ টাকা আর ১০০ টাকার জ্যামিতি বক্স ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্লাস্টিক ও স্টিলের স্কেল ডজনপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। রাবার ডজনপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

কথা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী মাসুদ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে, তাই নিজের খরচ চালাতেই হিমশিম খাই। সেই সঙ্গে শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে পড়ালেখা অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা অন্তত পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে।’

শেখপাড়ার জুনায়েদ ফটোশপের বিক্রেতা জানান, কাগজের দাম এখন বেশি। ২৮০ টাকার কাগজ এখন ৩৫০ টাকায় কেনা লাগে, তাই পেজ ফটোকপি করায় দাম বেশি। তিনি আরও জানান, প্রায় প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের দাম বেশি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

একজন অভিভাবক জানান, ‘মাঠে চাষ করে সন্তানকে লেখাপড়া করাই। জিনিসের এত দাম যে সংসারের খরচ চালানো কষ্ট। তার ওপর ছেলেটাকে পড়ার খরচ দিতে হিমশিম খাই। আবার শিক্ষা খরচ বাড়ছে, এত খরচ কীভাবে দেব। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে মনে হয় বাচ্চাটাকে আর পড়াতে পারব না।’

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সেই শিক্ষা অর্জন যদি ব্যয়বহুল হয়, তাহলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এমনকি পড়াশোনা বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারেন অনেকে। এ ছাড়া এসব শিক্ষাসহায়ক পণ্যের ভ্যাট বা ট্যাক্স কমিয়েও যদি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।

মো. হাসান
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া