চিঠি
চিঠি

চিঠিপত্র

শিশুশিক্ষার্থী দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য চাঁদা সংগ্রহ কবে বন্ধ হবে

কওম শব্দটা আরবি। যার অর্থ গোত্র, জাতি বা সম্প্রদায়। এই কওম শব্দ থেকেই কওমি মাদ্রাসার নামকরণ। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ অঞ্চলে তথা বাংলাদেশে আরও অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা গড়ে ওঠে। এই কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে। এখানে সরকার কর্তৃক কোনো বিধিনিষেধ বা হস্তক্ষেপ নেই। এ ছাড়া সরকারের কোনো অনুদানও গ্রহণ করে না মাদ্রাসাগুলো।

‎মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হয় চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে জনগণের আর্থিক সেবায় অথবা কোনো বেসরকারি সংস্থা-সংগঠন বা ফাউন্ডেশনের অনুদানের ভিত্তিতে। তাই জনগণের আর্থিক সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে মাদ্রাসাগুলো প্রতিবছর বিভিন্ন সময়ে চাঁদা কালেকশনের জন্য নেমে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে-গঞ্জে ও শহরে-বাজারে।

এতে নামিয়ে দেওয়া হয় মাদ্রাসার কোমলমতি ছোট শিশুদেরও। এতে অসহায় ও এতিম শিশুরা চাঁদা আদায় করতে গিয়ে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। অনেক সময় সমাজের পাছে লোকের দ্বারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হয়। এই চরম অপমান শিশুদের মানসিকভাবে ভেঙে ফেলে। শিশুদের ব্যবহার করে চাঁদা দাবি করা, এটি একটি মানবাধিকারের লঙ্ঘনও বটে।

কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালনার জন্য বছরে শুধু একটি সময়ে চাঁদা কালেকশন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং বছরে কয়েক দফায় শিশুশিক্ষার্থীদের চাঁদা আদায় করতে নেমে পড়তে হয়। বছরের শেষ অথবা শুরুর দিকে মাদ্রাসাগুলোর বার্ষিক সভা-মাহফিলের জন্য চাঁদা কালেকশন করতে হয়, হেমন্তের দিনে ধান চাঁদা, লবণ চাঁদা ও রমজান মাসে ফিতরা চাঁদা আদায় করতে হয়।

এ ছাড়া প্রতিবছর ঈদুল আজহার দিনে কোরবানির পশুর চামড়া আদায় করতে হয় কোমলমতি শিশুশিক্ষার্থীদের।

‎মুসলমানদের পবিত্র দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি ঈদুল আজহা। এ রকম একটি আনন্দের দিনেও শিশুদের মাদ্রাসায় আটকে থাকতে হয় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য। তখন এতিম শিশুরা একদিকে যেমন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে, অন্যদিকে ঈদুল আজহার মতো আনন্দের দিন কাটাতে হয় অমানবিক কাজের মধ্য দিয়ে।

এতে শিক্ষার্থীরা অমানবিক শিশুশ্রমের শিকার হয়। বঞ্চিত হতে হয় শিক্ষা, সুরক্ষা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে। এ ছাড়া সমাজের নেতিবাচক কটূক্তির কারণে তাদের মানসিক চাপ ও শারীরিক ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

‎মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের প্রতিটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা মানবিকতা ও মানবাধিকারের সুরক্ষা পেলে বেড়ে উঠবে দেশের একেকটা সম্পদ হিসেবে। তাই অবিলম্বে কওমি মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোমলমতি শিশুদের মাধ্যমে চাঁদা আদায়ের বিকল্প হিসেবে ভিন্ন পথ বেছে নেওয়া দরকার।

আবদুল্লাহ নাজিম আল মামুন

কওমি মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী