Thank you for trying Sticky AMP!!

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বিশ্ব জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ পরবর্তী ভয়াল দুশমনকে শনাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা কমছে। এবং সেটা চলমান কোভিড-১৯-এর চেয়েও ভয়ংকর মহামারিতে রূপ নিতে পারে। গত শুক্রবার রাতে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’-এর যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে কো-চেয়ারের বক্তব্যে বাংলাদেশের জননেতা উল্লিখিত হুঁশিয়ারি দেন। কোনো সন্দেহ নেই, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অসচেতনতার কারণে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একটা নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলেছে, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ৭০-৮০ শতাংশ রোগী সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মারা যায়। এবং ২৫ শতাংশ ব্যাকটেরিয়াই বাজারে পাওয়া সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধী। এ ছাড়া ৬০ শতাংশ টাইফয়েড জ্বরে সিপ্রোফ্লক্সাসিন অকার্যকর হয়ে গেছে। মৌসুমি জ্বরজারি, সর্দি-কাশি প্রধানত ভাইরাসজনিত হলেও ধুমসে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, আবার দু–তিন ডোজে ভালো হওয়ার পরই হঠাৎ তা বন্ধ করে দেওয়া এবং এভাবে জীবাণুকে আগ্রাসী হতে সহায়তা করার রূঢ় বাস্তবতা প্রায় কারও অজানা নয়। এভাবে কারণে-অকারণে এবং বয়স অনুযায়ী অযথাযথ মাত্রায়, নিম্নমানের এবং নির্দেশিত সময়কালের কম সময় অ্যান্টিবায়োটিক গলাধঃকরণ বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের অন্যতম কারণ। এই প্রেক্ষাপটে সর্বগ্রাসী আঘাত হানল অচেনা-অজানা কোভিড-১৯। বিশ্বের আরও অনেক অঞ্চলের মতো বাংলাদেশিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়লেন কম টাকায় সহজলভ্য অ্যান্টিবায়োটিকে। অথচ এগুলো সহজলভ্য যাতে না হয়, সে জন্য তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থাই নেওয়া হলো না।

গত আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল মাহমুদ আরাফাত প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সরকারের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ চলে যাওয়ার পরে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী মহামারি (অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এপিডেমিক) দেখা দেয় কি না, সেটা একটা বিরাট আশঙ্কা। কিন্তু আমরা দেখছি, ছোট-বড় সব শহরেই হাসপাতালগুলোতে কোভিডের উপসর্গ দেখা দিতে না দিতেই দামি দামি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের আনাচকানাচে গজিয়ে ওঠা ওষুধের দোকান থেকে মানুষ কত সহজেই ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারছে। অথচ এসব প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা নেই। এই মুহূর্তে এটাই সব থেকে অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে।

তবে মানুষকে শুধু বিরত থাকতে বললেই হবে না, তার সামনে রোগ সারানোর উপকরণগুলো সহজলভ্য করতে হবে। সাধারণত জীবাণুর কালচার সেনসিটিভিটি করেই কোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রযোজ্য, সেটা শনাক্ত করা হয়। কিন্তু তার জন্য তো ল্যাব লাগবে। কালচার রিপোর্ট প্রস্তুত এবং তার মর্মার্থ উদ্ধারে দরকার হবে দেশের সর্বত্র উপযুক্ত লোকবল নিশ্চিত করা।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল মেয়াদি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কনটেইনমেন্ট-বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো গত তিন বছরে বাংলাদেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে কী সাফল্য পেয়েছে? প্রতিবছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মারা যায়। শুধু ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রেই যদি বছরে ৫০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আমাদের দেশ যদি এখনই সতর্ক না হয়, তাহলে বাংলাদেশে পরিস্থিতি কোথায় যেতে পারে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা একমত যে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির মাত্রা বেড়ে গেছে। উন্নত বিশ্বে খেয়ালখুশিমাফিক অ্যান্টিবায়োটিক কেনাবেচা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে আরও অনেক সংবেদনশীল ক্ষেত্রের মতো এখানেও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এটাই সব থেকে বড় উদ্বেগের। এর অবসান হোক।