Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালের সংকট

করোনাকাল যেন নারীর জন্য এক ঘোরতর দহনকাল। বাল্যবিবাহ তথা করোনাকালে নারীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াবিষয়ক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক সমীক্ষায় ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তারা বলেছে যে বিশ্বব্যাপী ৩৩ হাজার নারী, যাদের বয়স আঠারো বছরের নিচে, তারা জোরপূর্বক বাল্যবিবাহের শিকার হবে। তাদের স্বামী হবে অনেক বেশি বয়সের পুরুষ। এ চিত্র বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। 

যদিও ইউএনএফপিএ তার জনসংখ্যাবিষয়ক ২০২০ সালের রিপোর্ট প্রকাশের জন্য ৩০ জুন একটি ভার্চু্যয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কিন্তু সেখানে কারোনাকালে নারীর নতুন বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়। নারী সমাজে এখনো দুর্বল, তার কিছু ক্ষমতায়ন তাকে এখনো যথেষ্ট সুরক্ষা দেয়নি। দুর্বলের ওপর সবলের সেই অত্যাচারের নীতি নারীকে এখনো নিপীড়িত ও বঞ্চিত করে চলেছে। বাংলাদেশের সমাজে নারীর ওপর গত কয়েক মাসে নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু প্রতিকারের উপায়গুলা সব রুদ্ধ বা বন্ধ রয়েছে। 

 সারা বিশ্বেই অবশ্য নারীরা কমবেশি চাপের সম্মুখীন। কারোনার কারণে খুব কমই তা গণমাধ্যমে আসছে। আগেও বেশি আসত না। এখন সেটা সমাজভেদে আরও কমেছে। যেখানে খাবার ও বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এই ইস্যু অনেকটাই চাপা পড়ে যাচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই, করোনা বাংলাদেশে নারীর জীবন ও জীবিকা দুটোরই মান কমিয়েছে। হতদরিদ্র ও নতুন দরিদ্র নারী জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ খুব বেড়ে গেলেও তার খবর কতটা মিলবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন। সুতরাং বাল্যবিবাহ রোধে পুলিশ এবং স্থানীয় সরকারকে খুবই সতর্ক করতে হবে। অনেকে যেমন বর্তমান ঢিলেঢালা পরিস্থিতির সুযোগ নেবে, তেমনি দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে বাঁচতেও অভিভাবকেরা বাল্যবিবাহে আগ্রহী হতে পারেন। 

সুতরাং কোনো একটি বাহিনী বা সংস্থার পক্ষে এটা সামাল দেওয়া কঠিন। সমাজসচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন থেকে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশি নারীর জীবন ভঙ্গুর হয়ে উঠছে। অনেক তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার প্রভাব বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই পড়বে। আমরা পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আশা করি, সেটা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

ইউএনএফপিএর নারীবিষয়ক নতুন সমীক্ষা বলেছে, করোনাকালে নারীর বিরুদ্ধে ১৯ রকম ক্ষতিকর চর্চা হতে পারে। ওই বিশ্লেষণে দেখা যায়, যদি সেবা এবং সহায়তা কর্মসূচি আরও ছয় মাসের জন্য বন্ধ থাকে, তাহলে বিশ্বে অতিরিক্ত ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বাল্যবিবাহ হবে। বাংলাদেশকে এর অভিশাপমুক্ত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।