এই উদাহরণ অনুসৃত হোক সবখানে

কালীগঞ্জে সমবায় হাসপাতাল

‘ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল/গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’। সমবায় এমন একটি ব্যবস্থা, যা মহাদেশ গড়তে না পারলেও বহু মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টার সমন্বয়ে বড় কাজ করতে পারে। স্থাপন করতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শুরুতে বিশ্বব্যাপী সমবায় আন্দোলন বেশ জোরদার হয়েছিল। আমাদের দেশেও গত শতকের ষাটের দশকে সমবায় আন্দোলন গতি পেয়েছিল; যার পথিকৃৎ ছিলেন পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা আবদুল হামিদ খান। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর পেছনে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও আছে। সমবায়ের নামে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা অনেক প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে হাওয়া হয়ে যাওয়ারও দৃষ্টান্ত আছে।

খ্রিষ্টান কো–অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড গাজীপুরে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়িতে ডিভাইন মার্সি নামে যে হাসপাতালটি করতে যাচ্ছে, সেটি এলাকাবাসী তো বটেই, সারা দেশের মানুষের জন্যই আশাজাগানিয়া উদাহরণ হতে পারে। যেখানে সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে ১০–২০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে সমবায়ী উদ্যোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩০০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
খুবই প্রশংসনীয়। গত শনিবার হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ ও সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজও এ হাসপাতালের মাধ্যমে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

আমাদের দেশে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সেবাপরায়ণতার অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ আছে। যখন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছায়নি, তখন খ্রিষ্টান মিশনারিরা সেসব স্থানে হাসপাতাল করে দরিদ্র ও দুস্থ মানুষকে সেবা দিয়েছেন। শান্তিতে নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা সেবাপরায়ণতার অনন্য উদাহরণ দেখিয়ে গেছেন। কলকাতা তাঁর কর্মস্থল ছিল। কিন্তু তিনি বাংলাদেশেও এসেছিলেন এবং এখানে তাঁর নামে একাধিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আছে। কালীগঞ্জের মঠবাড়িয়ায় যে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, আশা করি, সেটি বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যসেবা প্রদানে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

আমাদের দেশে সাধারণত সরকারি বা ব্যবসায়ীদের উদ্যোগেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান হয়। সে ক্ষেত্রে কালীগঞ্জে সমবায়ী উদ্যোগে ৩০০ শয্যার হাসপাতাল একটি বড় চ্যালেঞ্জও বটে। তবে আশার কথা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে এর উদ্যোক্তারা স্থানীয় আড়াই হাজার মানুষের মতামত নিয়েছেন এবং তাঁদের ৯০ শতাংশই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ধারণা করি, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের এই অংশীদারত্ব ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে।

কালীগঞ্জে খ্রিষ্টান কো–অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য স্থানেও অনুসৃত হোক। সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হাসপাতালসহ আরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক। তাতে জনগণের দোরগোড়ায় যেমন সেবা যাবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের তাঁদের সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়বে।