কাশিমপুর কারাগারের ঘটনা
কারাগারের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, জেল সুপার থেকে কারারক্ষী—সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার গুরুতর অভিযোগ আছে। কারাগারে সংঘটিত অনেক অনিয়ম-অপরাধ লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। আবার কোনো ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে কারাগারের পরিস্থিতি দিন দিন আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।
কাশিমপুর কারাগারের বন্দী হল-মার্কের জিএম তুষার আহমদের কারা কর্মকর্তাদের কক্ষে এক নারীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানোর খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর বিনিময়ে কারাগার-১-এর জেলার এক লাখ, ডেপুটি জেলার ২৫ হাজার এবং সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টর, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষী পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন বলে জেল সুপারের তদন্তে উঠে এসেছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। অভিযুক্ত জেলারের ভাষ্য অনুযায়ী, জেল সুপার রত্না রায়ের অনুমোদন নিয়েই বন্দীর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর অর্থ কারা প্রশাসনের আগাপাছতলা উৎকোচের সঙ্গে জড়িত। এই কাশিমপুর কারাগার থেকেই আদালতে নেওয়ার পথে এক জঙ্গি পালিয়ে গিয়েছিলেন। রোববার সহযোগী একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল ‘কারাগারে টাকায় সব মেলে’।
আইনানুযায়ী যেখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রবেশের সুযোগ নেই, সেখানে এক বন্দী সাক্ষাৎপ্রার্থীর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান কীভাবে? আর কোনো কর্মকর্তার কক্ষে সাক্ষাৎপ্রার্থী যাওয়ার কথা নয়। তিনি সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নির্দিষ্ট কক্ষে দেখা করবেন। এ ছাড়া কারাগারে অবাধে মাদক বেচাকেনা ও সেবনেরও অভিযোগ আছে। একশ্রেণির কারারক্ষী কেবল মাদক সরবরাহেই সহযোগিতা করেন না, তাঁরা নিজেরাও তা সেবন করে থাকেন। অনেক কারারক্ষী এই অপরাধে শাস্তিও পেয়েছেন। এভাবে কোনো দেশের কারা প্রশাসন চলতে পারে না।
কাশিমপুর কারাগারের ঘটনার পর সেখানকার জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নূর মোহাম্মদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রথমে যাঁর ওপর তদন্তের ভার দিলেন, পরে প্রমাণিত হলো তিনিও ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ রকম লোকদেখানো তদন্ত দিয়ে কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতি রহিত করা যাবে না।
অপর এক ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কারাগারগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্রয়-প্রশ্রয়’। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে এর আগে যেসব কর্মকর্তা অপসারিত হয়েছেন, তাঁদের ফের পদায়ন করার জন্য কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুরোধ করাও রহস্যজনক। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার এ ধরনের অনুরোধ করার উদ্দেশ্য কী?
বাংলাদেশের কারাগারে অনেক সমস্যা। সেখানে ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৬১৪ জন; অথচ বন্দী আছেন প্রায় ৯৫ হাজার। কারাগারে প্রয়োজনের তুলনায় লোকবলও কম। এসব সমস্যা ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে কারা প্রশাসনের অনিয়ম, অব্যবস্থা ও দুর্নীতি। কারাগার হলো বন্দীদের সংশোধনাগার। কারাগারের কর্মকর্তারা যেভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তাতে এ সংশোধনাগারগুলোরই সংশোধন দরকার। কাশিমপুর কারাগারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রত্যাহার করা কোনো শাস্তি নয়। কেননা, পরবর্তীকালে তিনি যেখানে পদায়িত হবেন, সেখানে একই কাজ করবেন। কাউকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা কোনো শাস্তি নয়।
আরও পড়ুন
-
সফর বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সাড়ে তিন মাসেই বিদেশ গেলেন প্রতিমন্ত্রীসহ ২৩ জন
-
কালও বন্ধ থাকবে যেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
-
আমেথি থেকে সরে শেষ মুহূর্তে কেন রায়বেরেলি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন রাহুল
-
প্রশ্নপত্র ফাঁস: ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ সব আসামি খালাস, রায়ে যা বলেছেন আদালত
-
প্রধানমন্ত্রী স্বজন বলতে স্ত্রী-সন্তানকে বুঝিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের