Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে মন্ত্রী-সচিব কোনো সুখবর শোনাতে পারেননি। বরং বাণিজ্যসচিব আরও এক মাস পেঁয়াজের বাজার নাজুক থাকবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে সাধারণ মানুষের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কেবল পেঁয়াজ নয়, চাল, আটা, ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, ডিম, সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি পাড়ার চায়ের দোকানও। এতে সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন।

প্রায় প্রতিবছরই পেঁয়াজের দাম নিয়ে ভজকট লেগে থাকে। সরকারি সূত্রের দাবি, এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে, ঘাটতি মাত্র ১০ লাখ টন। দুই সপ্তাহ আগেও যে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর পেছনে কাদের কারসাজি আছে, খুঁজে বের করা দরকার।

সোমবারের বৈঠকে মন্ত্রী-সচিব ছাড়াও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি), ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা যেসব তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছেন, তা ব্যবসায়ীদের স্বার্থই রক্ষা করবে; ভোক্তাদের স্বার্থ দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না।

কেবল পেঁয়াজ নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়তির দিকে। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে নতুন করে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছেন। একই অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসেরও (এলএনজি)। অতীতে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে কোনো দাবি পেশ করলে তাঁরা তা আদায় করে নেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তাঁরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য দুই দফা চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিলেই কি তাঁদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? সেটি যাতে কার্যকর হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আসল কথা, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রেও।

বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমত সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে গেলে সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারের নীতিগত সহায়তা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম দামে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার টিসিবির মাধ্যমে সেটি করেও থাকে। বর্তমানে যেভাবে চালসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে, তাতে টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃত করতে হবে।

সরকারকে মনে রাখতে হবে, করোনাকালে শহর ও গ্রামে উভয় এলাকার সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। তদুপরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তাঁদের খেয়ে–পরে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি বোধে নিয়মমাফিক বৈঠক করলেই হবে না; অবিলম্বে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে।