বাজারের ‘কারসাজি’ খতিয়ে দেখুন

ভোজ্যতেলের দাম

সরকার মঙ্গলবার ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দেওয়ার পর বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি তো করেনইনি, বরং বেশির ভাগ কোম্পানির তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এ খবর উদ্বেগজনক।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশকবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ১১৫ টাকা লিটারে বিক্রি হবে। বোতলজাত সয়াবিনের প্রতি লিটার বিক্রি হবে ১৩৫ টাকায়। এ ছাড়া পাম সুপার বিক্রি হবে ১০৪ টাকা লিটার দরে। বোতলজাত সয়াবিনের পাঁচ লিটারের দাম ধরা হয় ৬৩০ টাকা।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নির্ধারিত মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর এ আশাবাদের পর ক্রেতারা বাজারে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হয়নি। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর ১ নম্বর সেকশন বাজার ও মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা বৃহস্পতিবার জানান, কয়েকটি ব্র্যান্ডের তেলের সরবরাহ কয়েক দিন ধরে কম। দোকানে যে তেল আছে, তা আগের। এ কারণে তাঁদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মাত্র তিনটিতে জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের চার বোতল তেল পাওয়া গেছে। বাকিগুলোতে নেই।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১৬-১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এটা সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।

দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত হয় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। মেঘনা, সিটি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, বসুন্ধরা, টি কে, এস আলম গ্রুপসহ সাত-আটটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল আমদানি ও পরিশোধন করে বাজারজাত করে। কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি করে, যাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আরও বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না।

সরকার যখন কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেয়, তখন তা কার্যকরও করতে হবে। অন্যথায় অস্থিরতা আরও বাড়বে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোনো কিছু চাপিয়ে না দিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবিকেও কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করি।

সামনে পবিত্র রমজান মাস। ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, মসলাসহ অনেক পণ্যের চাহিদা বেশি থাকবে। আগে থেকে সজাগ না হলে চরম মূল্য দিতে হবে। যেমনটি গত বছর পেঁয়াজের ক্ষেত্রে হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিলেন। এর পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।

বাজারের স্বাভাবিক ধর্ম হলো সরবরাহ বেশি হলে দাম কমবে। সরবরাহ কম হলে দাম বাড়বে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকিও জোরদার করতে হবে। কেবল ভোজ্যতেল নয়, চালসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সরকারের উচিত তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।