জেলেদের সহায়তা না দিলে কার্যকর করা কঠিন

মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা

সরকার ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার সব নদ-নদী থেকে মা ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, বহন, মজুত ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থানে জেলেদের মাছ ধরার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো নিষেধাজ্ঞা যদি বাস্তবায়নই না হয়, তাহলে তা জারি করার 

অর্থ কী? অবশ্য আমাদের দেশে কোনো ক্ষেত্রেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরার অপরাধে ইতিমধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় ২৫ জন জেলের জেল-জরিমানা হয়েছে।

অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টিকে সাধারণভাবে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ সাগর থেকে নদ-নদীতে এসে ডিম ছাড়ে। ইলিশ উৎপাদন বাড়ানো ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই এ সময় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টিমূলক সভার মাধ্যমে জেলেদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। লিফলেট বিতরণ করে, ব্যানার ও পোস্টার টাঙিয়ে এবং মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে জনসাধারণকেও সচেতন করা হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন নদ-নদীতে অভিযান চালাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা মাছ ধরলে বুঝতে হবে নিরুপায় হয়েই তাঁরা এ কাজটি করছেন। জেল-জরিমানার শিকার কয়েকজন জেলে জানিয়েছেন, এই সময়ে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পাননি। অথচ যেসব জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাঁদের প্রত্যেককে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। সহায়তা পেতে জেলেদের সংশ্লিষ্ট ইউএনওর সুপারিশক্রমে স্থানীয় ইউপি সদস্য থেকে এ-সম্পর্কিত কার্ড সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে এ প্রক্রিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য জেলে বাদ পড়েন। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, সরকার চাল বরাদ্দ দিলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তা সময়মতো জেলেদের মাঝে বিতরণ করেননি। আবার এমনও হয়েছে যে শুধু নিবন্ধিত জেলেরা সহায়তা পেয়েছেন। নিবন্ধনের বাইরেও অনেক জেলে আছেন, তাঁরা কোনো সহায়তা পাননি। ফলে জেলেরা বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে মাছ ধরেছেন।

ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো ও সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারকে এখন এ বিষয়ে সুনজর দিতে হবে। প্রকৃত জেলেরা যাতে সময়মতো সহায়তা পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবতে হবে। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পরও যদি কোনো জেলে নিষেধাজ্ঞার
সময়ে মাছ ধরেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে আশা করি।
সচেতন থাকতে হবে।