Thank you for trying Sticky AMP!!

মেয়েসন্তান জন্মদানের ‘অপরাধ’

সম্পাদকীয়

২৩ বছর বয়সী রোকসানা খাতুনকে নববধূ বললে ভুল হবে না। কারণ, তাঁর বিয়ে হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। কদিন আগে তাঁর কোলে একটি সন্তান এসেছে। এটা তাঁর জন্য সুখের বিষয় হওয়াই স্বাভাবিক ছিল; কিন্তু তা হয়নি। বরং উল্টো ঘটনা ঘটেছে। নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লিনিক থেকে শ্বশুরবাড়ি গেলে শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁকে বাড়িতে ঢুকতেই দেননি। কারণ, তিনি যে শিশুটির জন্ম দিয়েছেন সে ছেলে নয়, মেয়ে। মেয়েশিশু জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ গৃহবধূ রোকসানা বেগম স্বামী-শ্বশুরের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি এখন বলছেন, তিন মাস আগেই তাঁকে তালাক দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্বামী রাজু মিয়াও একই সুরে বলছেন যে তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন।

রোকসানা খাতুন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁর গর্ভের সন্তানটি মেয়ে—ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এ কথা জানার পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তাঁর নিগ্রহ শুরু হয়েছিল। সে জন্য তিনি বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। প্রসববেদনা উঠলে তাঁকে বাবার বাড়ির লোকজনই একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর মেয়েসন্তান প্রসবের পর তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন তাঁকে নবজাতকসহ তাঁর স্বামী-শ্বশুরের বাড়িতে তুলে দিতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।

রোকসানার স্বামী রাজু মিয়া ঢাকার একটি খাবার হোটেলে চাকরি করেন। স্ত্রী মেয়েসন্তান প্রসব করবেন বলে তিনি তাঁকে দেখতে পর্যন্ত যাননি। কিন্তু এখন তিনি বলছেন অন্য কথা। মেয়েসন্তানের কারণে নয়, তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তাঁর ‘চরিত্র’ খারাপ বলে। রোকসানা খাতুন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আশা ছিল ছেলেসন্তানের। কিন্তু মেয়েসন্তান হবে জানতে পারার পর থেকেই তাঁর ওপর তাঁদের ‘নির্যাতন’ শুরু হয়েছিল। অবশেষে তাঁকে ‘তালাক দেওয়া হয়েছে’ বলে পরিত্যাগ করার চেষ্টা চলছে। সাদুল্যাপুর থানার পুলিশ তাঁকে তাঁর বাবার বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে বটে, কিন্তু নবজাতক সন্তানসহ তাঁকে বিতাড়িত করার বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের বক্তব্য হলো, রোকসানা খাতুন পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ পেশ করলেই শুধু তাঁরা পদক্ষেপ নেবেন।

মেয়েসন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে এ রকম বৈরী আচরণের শিকার গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের রোকসানা বেগম একা নন। সারা বাংলাদেশেই এ ধরনের অনভিপ্রেত ও অন্যায় ঘটনা ঘটে থাকে। গুরুতর এ সামাজিক সমস্যা কেবল আইনি প্রক্রিয়ায় দূর করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। তা ঘটতে পারে শিক্ষাবিস্তার এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে।