'ভিআইপি' সংস্কৃতির অবসান হোক
‘অ-সাধারণ’ হওয়ার সুবিধা পূর্ণমাত্রায় ভোগ করতে গেলে ‘সাধারণ’ মানুষের অসুবিধার কথা আমলে নিলে চলে না। এই কথা ‘অ-সাধারণ’ বা অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা (ভিআইপি) ভালো করে জানেন। ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ বা ‘জনগণের সেবক’ হিসেবে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা তাঁদের মূল দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে সেই দায়িত্ব পালনের আগ্রহের চেয়ে তাঁদের নবলব্ধ ক্ষমতার আস্ফালন অনেক বেশি চোখে পড়ে। সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা ক্ষমতার আস্ফালনেরই নামান্তর। বিভাজনেরও বটে। এই বিভাজন পদাধিকারের। ক্ষমতারও।
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে গত ২৮ জুলাই যে ‘ভিআইপি কাণ্ড’ ঘটে গেল, তা সেই ক্ষমতার আস্ফালনের দানবিক চেহারাকে আরও একবার জনসমক্ষে উন্মোচিত করল। ওই দিন সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক স্কুলছাত্রকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা আসছিল। ঘাটে ফেরি দাঁড়ানো ছিল। তিতাস ঘোষ নামের ১১ বছর বয়সী ওই স্কুলছাত্রের স্বজনেরা কর্মকর্তাদের হাত–পা ধরে অনুরোধ করার পরও তাঁরা ফেরি ছাড়েননি।
কারণ, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ঘাট কর্তৃপক্ষকে ‘জরুরি বার্তা’ দিয়ে বলেছিলেন, এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল পার হবেন। তাঁর গাড়ি না পৌঁছানো পর্যন্ত ফেরি ছাড়া যাবে না। তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পর আবদুস সবুর মণ্ডলের গাড়িটি ফেরিতে ওঠার পরে সেটি ছাড়া হয়। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই মাঝনদীতে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় তিতাস। এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু না বলে কেউ যদি ‘নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড’ সাব্যস্ত করেন, তাহলে তা মোটেও অযৌক্তিক হবে না।
একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার ব্যক্তিও যদি ‘ভিআইপি’ হিসেবে সুবিধা পান, তাহলে দেশে কত শ ভিআইপি আছেন, তাঁদের ‘ভিআইপি’ সফরের জন্য কত শ ফেরি কত ঘণ্টা আটকা থাকবে এবং সে জন্য কতজন তিতাসকে মরতে হবে, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। যানজটের চাপে যখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে, অসুস্থ ব্যক্তির প্রাণ সংশয় হয়, তখন তাঁরা ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে ভিআইপিদের ভোঁ ভোঁ হুইসেল বাজিয়ে গন্তব্যে ছোটা কতটা সমীচীন, তা ভাবতে হবে। কারণ, এই ভিআইপি সংস্কৃতির চর্চা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
হাতে ক্ষমতা পেলে নিজেকে ‘বিশেষ’ ভাবার প্রবণতা তৈরি হয়। এই প্রবণতা থেকেই সাধারণ মানুষকে অপদস্থ করার এবং সাধারণের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার ‘সম্ভ্রান্ত’ ইচ্ছার জন্ম হয়।
তিতাসের বড় বোন তন্নীসা ঘোষ বলেছেন, ‘আমার ভাইয়ের জীবন কেড়ে নিল ভিআইপি। এ দেশে জীবনের দাম বেশি, না ভিআইপিদের দাম বেশি?’ তন্নীসা ঘোষের এই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, নির্বাহী বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।
আরও পড়ুন
-
ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে প্রেসিডেন্ট নিহত: এখন পর্যন্ত কী ঘটল
-
ভোটে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ, ডিপজলের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা
-
কে এই মোহাম্মদ মোখবার, তিনিই কি ইরানের পরবর্তী কান্ডারি
-
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব আরোহী নিহত
-
তাঁরা কারাগারে বসে নির্দেশ দেন, বাইরে চলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি