চট্টগ্রামের ব্যস্ততম অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের করুণ দশা সেখানকার নগরসেবার চরম দুর্ভোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সড়কটির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পথজুড়ে এখন ধুলা, গর্ত আর ইটের জোড়াতালির রাজত্ব। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মধ্যকার দীর্ঘ ১০ বছরের আমলাতান্ত্রিক টানাপোড়েনের শিকার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক। দুই সংস্থার টানাটানির দুর্ভোগের কি অবসান ঘটবে না, প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সড়কটি কেবল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনন্যা আবাসিক এলাকার প্রবেশপথ নয়, এটি হাটহাজারী, রাউজান এবং পার্বত্য রাঙামাটির বাসিন্দাদের নগরের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প একটি মাধ্যম। এ সড়কের করুণ দশার সরাসরি শিকার অন্তত এক লাখ মানুষ, যার মধ্যে রয়েছেন হাজারো রোগী, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা। বেলতলী এলাকায় বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালের অবস্থান, যেখানে প্রতিদিন ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল রোগীরাও সেবা নিতে আসেন। একই সঙ্গে এই পথে চলাচলকারী ১০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব নিয়ে সিডিএ এবং সিটি করপোরেশন উভয় সংস্থাই একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে। সিডিএ ২০০৫ সালে প্রকল্প শুরু করলেও, গত ১০ বছরে তারা সিটি করপোরেশনকে সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। সিটি করপোরেশন বলছে, বুঝে না পাওয়ায় তারা সেখানে বড় কোনো সংস্কারকাজ করতে পারছে না। অন্যদিকে সিডিএর পক্ষ থেকে নামমাত্র ইট-সুরকির জোড়াতালি দিয়েই দায় সারা হয়েছে এবং তারা স্বীকার করেছে যে বড় সংস্কারের জন্য তাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। সিডিএর পক্ষ থেকে সড়কটি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন ও চিঠি চালাচালি হচ্ছে, কিন্তু এই প্রক্রিয়া যে গতিতে চলছে, তাতে স্থানীয় জনগণের ভোগান্তি কবে শেষ হবে, তা অনিশ্চিত।
অনন্যা আবাসিক এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দ্রুত হলেও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কেন এমন ঢিলেমি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বেহাল রাস্তার কারণেই আবাসিক এলাকায় পুরোপুরি বসতিও গড়ে ওঠেনি। এই পরিস্থিতিতে শুধু কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা বা বরাদ্দের অভাব দেখিয়ে দায় এড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন হয় সিডিএকে জরুরি ভিত্তিতে বড় আকারের সংস্কারকাজ শুরু করতে হবে অথবা দ্রুত সিটি করপোরেশনকে সড়কটি হস্তান্তর করতে হবে, যাতে নগর কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করতে পারে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নকাজে সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহির অভাব কতটা প্রকট, তা এই সড়কের চিত্র দিয়ে স্পষ্ট হয়। আমরা আশা করব, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক দ্রুত সংস্কার করার জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।