সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পাখির জন্য পানি

দাবদাহে ঝিনাইদহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ

দাবদাহে গোটা দেশ নাভিশ্বাস তুলছে। এবার এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরে হয়নি। কখন যে বৃষ্টি হবে—এমন হাপিত্যেশ আজ দেশজুড়ে। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিও দাবদাহে তীব্র কষ্টে আছে। পাখিদের জন্য ব্যালকনিতে পানির পাত্র রাখার আহ্বানও আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। তবে ঝিনাইদহের এক ব্যক্তি পাখিকে পানি পান করাতে দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছেন। গাছের মধ্যে পাখির জন্য পানির পাত্র বেঁধে দিচ্ছেন তিনি। তাঁর এমন উদ্যোগ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বাংলাদেশের ভয়াবহ দাবদাহ উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। প্রচণ্ড গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের অবস্থা তো আমরা সংবাদপত্রে দেখলাম। কিন্তু মুক্ত পশুপাখিদের কষ্ট আরও করুণ।

কোথাও এখন আগের মতো জলাশয় নেই। শহর থেকে গ্রামে কংক্রিট গিলে খাচ্ছে সবকিছু। জলাশয়ের যা অবশিষ্ট আছে, তা–ও দাবদাহে শুকিয়ে গেছে প্রায়ই। ফলে পশুপাখিরা পানি পাবে কোথায়? এমন চিন্তা থেকেই এগিয়ে এসেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা জহির রায়হান।

৫০ বছর বয়সী জহির রায়হান পেশায় একজন রংমিস্ত্রি। যখন যে এলাকায় কাজ করেন, সেখানেই গাছে গাছে বেঁধে দিচ্ছেন পাখির জন্য পানির পাত্র। প্রতিদিন গড়ে গাছে ২০টি করে পানির পাত্র বাঁধছেন তিনি। ঝিনাইদহ শহরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে এ পর্যন্ত ৮০টি পানির পাত্রের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। একটি পাত্র বাঁধতে তাঁর খরচ হচ্ছে ২০ টাকা। পোলট্রি মুরগির খাবার দেওয়ার পাত্র বা পুরোনো পানির বোতল কেটে গাছে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন।

জহির রায়হান বলেন, প্রচণ্ড গরমে মাঠে-খালে-বিলে কোথাও পানি নেই। পাখিরাও পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাই তিনি পাখির জন্য পানির ব্যবস্থা করছেন। এক সপ্তাহ ধরে গাছে গাছে পানির পাত্র বাঁধতে শুরু করেছেন তিনি। খাল–বিল, নদী–নালায় পানি না জমা পর্যন্ত তিনি এই কাজ করবেন।

নির্বিচার পাখি হত্যার খবরই আমরা বেশি দেখি সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু পাখি রক্ষায় বা সুরক্ষায় এখনো কিছু অন্তঃপ্রাণ মানুষ আছেন; যাঁরা শিকার হওয়া পাখিদের উদ্ধার করেন, পাখিদের নিয়মিত খাবার দেন। জহির রায়হান তেমনই একজন পাখিদরদি মানুষ। পাখিদের পিপাসা মিটিয়ে উদাহরণ তৈরি করেছেন খেটে খাওয়া এই মানুষ। প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি তাঁর এমন ভালোবাসা অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হোক।