চিড়িয়াখানায় গাফিলতি

প্রাণীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করুন

মানুষ ও অবলা প্রাণীদের নিরাপত্তা যেসব স্থানে পরস্পর সম্পর্কিত, সেসব জায়গায় গাফিলতি ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে সিংহী ডেইজির খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়ার ঘটনা সেই গাফিলতিকেই সামনে এনেছে। প্রথম আলোর খবরে এসেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মচারীর গাফিলতিতে খাঁচা ঠিকমতো লক না হওয়ায় ঘটেছে এমন এলাহি কাণ্ড। ঘটনার দায়ে ওই কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ এসেছে নিরাপত্তা জোরদার, জনবল বাড়ানো ও যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই সুপারিশগুলো তো নতুন নয়। তবু বছরের পর বছর এগুলো উপেক্ষিত ছিল কেন?

চিড়িয়াখানা নামে প্রাণীদের বন্দিশালা ও মানুষের বিনোদনকেন্দ্র আধুনিক সভ্যতার অমানবিক দিক উন্মোচন করে। সেখানেও কি প্রাণীদের সুরক্ষা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি? চিড়িয়াখানার মতো সংবেদনশীল স্থানে নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতিটি ধাপ বহু স্তরের হওয়া জরুরি। সেখানে একজন কর্মচারীর ভুল মানে কেবল তাঁর চাকরির জন্য হুমকি নয়; তা হতে পারে মানুষের জীবনহানি, প্রাণীর মৃত্যু কিংবা দীর্ঘস্থায়ী আতঙ্কের কারণ।

এই ঘটনার আরেকটি দিক আরও গভীর উদ্বেগের। খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার পর এবং পরে খাঁচায় ফেরত নেওয়ার সময় সিংহী ডেইজিকে অনেকের কাছেই শারীরিকভাবে দুর্বল বলে মনে হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—জাতীয় চিড়িয়াখানায় সিংহের মতো বড় ও বন্য প্রাণীরা আদৌ কি যথাযথ পুষ্টি ও চিকিৎসা পাচ্ছে? তাদের স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তো? 

শারীরিক সুস্থতার বাইরে রয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, মানসিক সুস্থতা। বন্য প্রাণীদের জন্য চিড়িয়াখানার সীমিত পরিসর স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপের কারণ। পর্যাপ্ত জায়গা, প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুকরণ, আচরণগত উদ্দীপনা ছাড়া সিংহ, বাঘ বা হাতির মতো প্রাণীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকার কথা নয়। আমাদের চিড়িয়াখানাগুলো কি সেই মানদণ্ডে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে? নাকি কেবল প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই প্রাণীগুলোকে বন্দী করে রাখা হচ্ছে! 

ডেইজির ঘটনা বড় দুর্ঘটনায় রূপ নেয়নি। কিন্তু এটিকে সতর্কবার্তা হিসেবে না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। শুধু একজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করলেই দায় শেষ হয় না। প্রয়োজন চিড়িয়াখানা ব্যবস্থার সমন্বিত সংস্কার। যা নিরাপত্তা, অবকাঠামো, জনবল, প্রশিক্ষণ এবং সর্বোপরি প্রাণীদের শারীরিক ও মানসিক কল্যাণ নিশ্চিত করবে। 

আমরা আশা করি, এ ঘটনা কেবল সাময়িক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও প্রাণীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার দায়িত্বশীল ও টেকসই পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিয়মিত তদারকি ও স্বচ্ছ জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে গাফিলতির দায় আর কখনো অবহেলার সংস্কৃতিতে হারিয়ে না যায়।