সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পিরোজপুরের ভূমি অফি

ঘুষের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

ভূমি অফিসে নামজারি করতে চাইলে আসলে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়? প্রথম আলোর খবর, ‘নামজারির ঘুষ নির্ধারণ করে দিলেন এসি ল্যান্ড, ছড়িয়ে পড়েছে অডিও’। এটি পড়ে যে কারও মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে। কারণ, পিরোজপুরের নাজিরপুরে সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমানকে আমরা বলতে শুনলাম, এখন থেকে নামজারি করতে ছয় হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে।

এই খবর থেকে আরও জানা যাচ্ছে, জমি বিক্রির পর পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারি বলে। বিক্রি ছাড়াও উত্তরাধিকার ও দানসূত্রে জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। জমির মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন মালিকের নামে নামজারি করে রেকর্ড করতে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করতে হয়। এ জন্য সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, পিরোজপুরের ভূমি অফিসে সরকারি খরচের বাইরে উপরিটা যাচ্ছে ‘সরকারি’ নামধারী দুর্বৃত্তদের কাছে। ভূমির মালিকানা নিয়ে যত বেশি জটিলতা, উপরির হারও তত বেশি। ঘুষের ‘রেট’ কখনো কখনো ২০-২৫ হাজার টাকা ছাড়ায়। মূলত এ কারণেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে ঘুষের পরিমাণ ঠিক করছিলেন।

প্রশ্ন হলো, ভূমি অফিসের এই অরাজক পরিস্থিতির কথা কি তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন? জানালে তাঁরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? আর এই অবস্থা কি শুধু পিরোজপুরেই? ভূমি অফিসে হয়রানির অভিযোগ তো পুরোনো। সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুনছি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হচ্ছে। মানুষের হয়রানি কমে আসবে। এত বছরেও কেন সরকার মানুষকে একটা হয়রানিমুক্ত ভূমিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারল না, এর জবাব কি কর্তৃপক্ষ দেবে?

এবার আসি ‘উপরি’ আয় প্রসঙ্গে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পর থেকে বছরওয়ারি তাঁর ব্যক্তিগত আয়ের হিসাব দিতেন। দুঃখের বিষয়, তিনি না জনপ্রতিনিধি, না সরকারি কর্মচারী—কারও কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারলেন না। আমরা কেবল আকাশে-বাতাসে অসদুপায়ে উপার্জিত টাকায় দেশের বাইরে সম্পদ গড়ার খবর পাই নানাজনের বিরুদ্ধে।

দুর্নীতি দমন কমিশনই-বা করে কী? তারা কি ভূমি অফিসের এই দুর্নীতি নিয়ে কোনো তদন্ত করেছে? দুদকের জালে রুই-কাতলা ধরা পড়ে না, এমন অভিযোগ আছে। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে চুনোপুঁটিও তাদের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

আমরা জানতে পেরেছি, পিরোজপুরের সহকারী কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রশাসন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের পূর্ণ সুরক্ষা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভূমি অফিসের কারা কারা ঘুষের সঙ্গে জড়িত, সে সম্পর্কে প্রশাসন জানতে পারত। ব

রাবরের মতোই তারা একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে চমক সৃষ্টির আয়োজন করে বাকিদের আড়াল করল। আমরা চাই প্রশাসন ভূমি অফিসের লোকজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনে যাচাই করুক। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।