সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বর্ষবরণে আতশবাজি

আগে থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুন আরেকটি বছর একেবারেই দ্বারপ্রান্তে। খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারের আরেকটি বছর শেষ হয়ে এল। বছর শেষে প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি ছাড়াও নতুন বছরে কার কী পরিকল্পনা, সেই হিসাব করেন সবাই। তবে বর্ষবরণের যে উৎসব প্রচলিত হয়ে গেছে দেশে, তা নিয়েও আছে শঙ্কা। কারণ, সেই উৎসব উদ্‌যাপন করতে গিয়ে প্রাণপ্রকৃতি ঝুঁকির মুখে পড়ে, অনেক পাখি মারা যায়, পুড়ে যায় ঘরবাড়ি–ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, আহত হয় মানুষও। পুলিশের কঠোর নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। কথা হচ্ছে, শুধু নিষেধাজ্ঞা দেওয়াই কি যথেষ্ট?

আমাদের এখানে থার্টি ফার্স্ট প্রধানত শহুরে উৎসব আকারে হাজির হয়েছে নাগরিক সমাজে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্‌যাপনের পরিধি বেড়েছে। একটা সময় ওপরতলার মানুষের মধ্যে এ উৎসব সীমিত থাকলেও এখন সর্বত্র এর উদ্‌যাপন চোখে পড়ার মতো। অভিজাত হোটেল–রেস্তোরাঁ ছাড়াও ঘরে ঘরে বা ভবনের ছাদে ছাদে চলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উদ্‌যাপন। সেখানে অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো। মধ্যরাতে গোটা শহর প্রকম্পিত হয় আতশবাজির বিকট শব্দে। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ে কংক্রিটের শহরে টিকে থাকা মুষ্টিমেয় পাখি ও প্রাণী। হাসপাতালের মতো জায়গায় যেখানে অনেক সংকটাপন্ন রোগী চিকিৎসা নেন, তার আশপাশেও নির্বিচার আতশবাজি ফোটানো হয়।

শুধু তা–ই নয়, আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস ওড়াতে গিয়ে অনেক মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ে আহতও হন। আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শিশুরাও আহত হয়। উড়ন্ত ফানুস বাসাবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও নতুন নয়। দোকানপাট ও গুদাম পুড়ে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে মানুষ, এমন ঘটনাও আছে। তা ছাড়া চরম মাত্রায় শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ তো আছেই।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিবছর আগেই এ ব্যাপারে সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা দিলেও কার্যত তা মানা হয় না। নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা গ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। লাখ লাখ মানুষ এমন পরিবেশবিরোধী ও অমানবিক উৎসবে মেতে ওঠে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কষ্টসাধ্য ও জটিল। এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রস্তুতি হিসেবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়—যেমন আতশবাজি, পটকা ও ফানুস বেচাবিক্রির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা; উৎসবকে ঘিরে এসব পণ্যের প্রস্তুতকরণ, বাজারজাত ও গুদামজাতের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান থাকবে প্রাণপ্রকৃতি ও মানুষের কথা বিবেচনা করে ক্ষতিকর অনুষঙ্গগুলো উৎসব উদ্‌যাপন থেকে পরিহার করার। এটি আমাদের সবার নাগরিক দায়িত্বও।