সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কাপ্তাই হ্রদে দুর্ঘটনা

অবৈধ নৌযান ঠেকাতে অভিযান বাড়ান

কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনসম্পদ। পাহাড়, পানি আর মানুষের জীবিকা মিলিয়ে এ হ্রদ একটি সংবেদনশীল জনপরিসর।

কিন্তু সেই পরিসর আজ ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার শিকার। প্রথম আলোর খবরে এসেছে, পর্যটকবাহী নৌযানের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, লাইফ জ্যাকেটের ঘাটতি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং নিবন্ধনহীন নৌযানের দাপট কাপ্তাই হ্রদকে কার্যত একটি ঝুঁকিপ্রবণ নৌ এলাকায় পরিণত করেছে।

ছাদে যাত্রী নিয়ে দোতলা নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে, কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ নৌযানে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট নেই, থাকলেও যাত্রীদের তা পরতে উৎসাহিত করা হয় না। চালকদের বক্তব্য আরও উদ্বেগজনক। পর্যটকেরা নাকি লাইফ জ্যাকেট পরতে চান না, তাই কেনা হয়নি। নিরাপত্তা যেখানে বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা, সেখানে সেটিকে ‘ইচ্ছার বিষয়’ বানিয়ে ফেলা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ স্বীকার করছে যে কাপ্তাই হ্রদে ঠিক কত নৌযান চলছে, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব তাদের কাছে নেই। এ স্বীকারোক্তিই পুরো ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রমাণ। দুই শতাধিক নৌযানের মধ্যে দেড় শতাধিকই অবৈধভাবে চলাচল করছে—এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা অনিবার্য। অতীতের ঘটনাগুলো তারই নির্মম সাক্ষ্য। একের পর এক প্রাণহানি ঘটেছে, তদন্ত হয়েছে, নির্দেশনা জারি হয়েছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র বদলায়নি।

নৌযান মালিক সমিতিগুলোর বক্তব্যও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। একদিকে তারা বলছে, সব নৌযানে লাইফ জ্যাকেট রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে সরেজমিন দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। নির্দেশনা থাকলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটি নিশ্চিত করাও সমান জরুরি। এখানে প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ এবং মালিক সমিতি—তিন পক্ষই নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।

পর্যটননিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। বিশেষ করে যেখানে পরিবার, শিশু ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌভ্রমণে নামছেন, সেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও কঠোর হওয়া দরকার। নিবন্ধনহীন নৌযান বন্ধ করা, যাত্রীসংখ্যা নির্ধারণ কঠোরভাবে মানানো, লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং নিয়ম ভাঙলে তাৎক্ষণিকভাবে নৌযান জব্দ ও লাইসেন্স বাতিল—এ পদক্ষেপগুলো আর বিলম্বিত করা যায় না।

কাপ্তাই হ্রদে আরেকটি দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করার কোনো যুক্তি নেই। আমরা আশা করি, কাপ্তাই হ্রদের সাম্প্রতিক অনিয়ম ও দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতা প্রশাসনকে অবশেষে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে। কাগুজে নির্দেশনা নয়, বাস্তব ও দৃশ্যমান তদারকির মাধ্যমে নৌযান চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।