দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার উত্তর দাউদপুর গ্রামের ভ্যান ও ইজিবাইকচালকেরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে একটি সড়ক সংস্কার করেছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব নাগরিককেই কেন পালন করতে হয়, এমন প্রশ্ন যেমন ওঠে; আবার সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় নাগরিকের অংশগ্রহণের বিষয়টিও চিত্রায়িত হয়। তাঁদের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় কোনো সরকারি অনুদান ছিল না, ছিল না কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। ছিল শুধু নিজেদের দুর্দশা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গ্রামের ফসলের মাঠের মাঝখান দিয়ে যাওয়া দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি বর্ষার কাদায় ডুবে গিয়েছিল, সেই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য তাঁরা রাতের আঁধারে কোদাল আর কাঠের খাটিয়া হাতে নেমে পড়েন। এ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, যখন সরকারি উদ্যোগের অভাব থাকে, তখন সাধারণ মানুষ কীভাবে নিজেদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। শামসুল আলম, আবুল কালাম আজাদদের মতো খেটে খাওয়া মানুষেরা জানেন, রাস্তা খারাপ হলে শুধু তাঁদের ব্যক্তিগত আয়ই কমে না, গ্রামের শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়, অসুস্থ রোগী হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে না আর কৃষকের পণ্য বাজারে নিতেও চরম ভোগান্তি হয়। এক দিনের আয় বন্ধ হয়ে গেলে যেখানে পেটে ভাত জোটে না, সেখানে নিজেদের কষ্ট হলেও রাস্তা সারানো তাঁদের কাছে একধরনের আত্মরক্ষার লড়াই।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি যেমন সেখানকার স্কুলশিক্ষক, মসজিদের ইমামের সমর্থন এই উদ্যোগের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু কেন স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল? যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে, সেই রাস্তা কেন স্থানীয় সরকারের নজর এড়িয়ে গেল?
ভ্যানচালকদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তঁারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই নয়, সমাজের কল্যাণেই এমন মহতী কাজে এগিয়ে এসেছেন। গ্রামগঞ্জের মাটির রাস্তা বা কাঁচা রাস্তাকে গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড বললে অত্যুক্তি হবে না। এই রাস্তাগুলো সচল না থাকলে গ্রামগঞ্জের স্থানীয় অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। তাই সরকারের উচিত এ ধরনের স্বেচ্ছাশ্রমকে সাধুবাদ জানানো এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
বিরামপুরের খেটে খাওয়া মানুষদের এ উদ্যোগ দেশের অন্যান্য এলাকার জন্যও অনুপ্রাণিত হোক।