শরীয়তপুরে পুকুর ভরাট

জলাশয়টি অতিসত্বর পুনরুদ্ধার করা হোক

দেশে নদী-খাল দখল হয়ে যাচ্ছে, পুকুরগুলোও ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। অথচ এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারি আইন আছে, আইন প্রয়োগ করার কর্তৃপক্ষও আছে। স্থানীয় প্রশাসনও এসবের অভিভাবক। কিন্তু কোনোভাবেই প্রাকৃতিক এসব সম্পদ রক্ষা করা যাচ্ছে না। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব দখলবাজির সঙ্গে যুক্ত। অনেক সময় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও জলাশয় রক্ষা করা যাচ্ছে না। শরীয়তপুরের জেলা শহরেও একটি পুকুর হারিয়ে যেতে বসেছে। সেখানে বহু বছরের পুরোনো মন্দিরকে কেন্দ্র করে এ দখলবাজি চলছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জেলা শহরের ধানুকা এলাকার একটি মন্দিরের পুকুর বালু দিয়ে ভরাট করে প্রায়ই দখল করে ফেলেছেন আবদুল লতিফ ঢালী নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। পাঁচ শতাধিক বছর আগে ধানুকায় ১৫ একর জমির ওপর জমিদার ময়ূর ভট্টের বাড়ি গড়ে তোলা হয়। ওই বাড়িতে মনসামন্দির, কালীমন্দির, দুর্গামন্দির, টোলঘর ও পাঠশালার অবকাঠামো রয়েছে। ময়ূর ভট্টের বাড়ির অধিকাংশ জমি দখলে চলে গেছে। এখন এ পুকুরও রেহাই পাচ্ছে না। 

ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দির কমিটির বক্তব্য, ওই পুকুর মনসাবাড়ির পূজার্চনা ও বিভিন্ন প্রতিমা বিসর্জনের কাজে ব্যবহার করা হতো। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সেটি এখন দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন লতিফ ঢালী। অন্যদিকে লতিফ ঢালীর দাবি, ‘ওই সম্পত্তি আমি নিলামে খরিদ করেছি। ওটা দেবোত্তর নয়। দুই দফায় মিউটেশন করা হয়েছে। আমার প্রয়োজনে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছিল।’ তবে নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যে সময় এ পুকুরের নিলাম হয়েছিল, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৯ বছরের কিছু বেশি। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিলাম খরিদ করতে পারেন না। আর দেবোত্তর সম্পত্তি নিলাম দেওয়া হয় না। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াসও বলছেন, ‘ধানুকা মনসাবাড়ির পুকুরটি দেবোত্তর সম্পত্তি। ওই সম্পত্তি নিলাম করার কোনো সুযোগ নেই। আর মিউটেশন ও জরিপে ভিপি ১/১ খতিয়ানে যাওয়ারও সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে অসদুদ্দেশ্যে এ কাজগুলো করা হয়েছে।’ আরও একটি বিষয় হচ্ছে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও আইনানুযায়ী পুকুর ভরাট করার অধিকার নেই লতিফ ঢালীর। তথ্য গোপন করে জালিয়াতি করার জন্য কেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? 

মন্দির কমিটির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন সেখানে চার দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বালু ভরাটের কাজ বন্ধ করেছিলেন। পরে দিনের পরিবর্তে তাঁরা রাতের আঁধারে ভরাট শুরু করেন। আমরা আশা করব, এবার জেলা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। শুধু তা–ই নয়, ভরাট করা পুকুরটিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেটি করা না গেলে আগে–পরে পুকুরটিকে বাঁচানো যাবে না।