সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

রাজধানীর জনপরিসর

খেলার মাঠগুলো ব্যবহার উপযোগী করুন

রাজধানী ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর অন্যতম একটি কারণ, এ শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, পার্ক ও অন্য জনপরিসর নেই। মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকার খেলার মাঠগুলোর চিত্র খুবই হতাশাজনক। যেখানে শিশু-কিশোরদের নির্মল বিনোদন, বয়স্কদের হাঁটার পথ এবং সুস্থ সামাজিক পরিবেশ গড়ে ওঠার কথা, সেখানে অনেক মাঠই পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ও প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসার কেন্দ্রে। এমন পরিস্থিতি থেকে মাঠগুলোকে রক্ষা করতেই হবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, টাউন হল মাঠ, সলিমুল্লাহ রোড, তাজমহল রোড, জাকির হোসেন রোড এবং লালমাটিয়ার মাঠগুলো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোহাম্মদপুরের টাউন হলের শহীদ পার্ক খেলার মাঠের। মাঠের প্রধান প্রবেশপথগুলো অস্থায়ী চা-সিগারেট আর আসবাবের দোকানের দখলে। ভেতরে মাদকসেবীদের অবাধ আনাগোনা, খোলা জায়গায় মূত্রত্যাগের ফলে দুর্গন্ধে হাঁটার অনুপযোগী পরিবেশ। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির তত্ত্বাবধানেই চলছে অবৈধ দোকানপাট ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নামে চলে ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা। ফলে সাধারণ মানুষ তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সলিমুল্লাহ রোডের মাঠে নিয়মিত বসে অস্থায়ী বাজার, যেখানে প্রতি চার হাত জায়গার জন্য হকারদের ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তবে এই টাকা কারা নেয়, তা এক রহস্য। তাজমহল রোডের মাঠে সিটি করপোরেশন কর্তৃক উন্নয়নকাজ চললেও তদারকির অভাবে মাদকাসক্তদের আনাগোনা কমছে না। একইভাবে শেরশাহ সুরি রোড ঈদগাহ মাঠ এবং জাকির হোসেন রোডের মাঠেরও কোনো তদারকি নেই।

তবে ইকবাল রোডের উদয়াচল পার্ক ও খেলার মাঠ স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে পেয়েছে। অন্যদিকে ইকবাল রোড পার্ক অ্যান্ড ফিল্ড একটি স্থানীয় ক্লাব কমিটির তত্ত্বাবধানে নিজস্ব অর্থায়নে চলছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাদের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, সঠিক উদ্যোগ নিলে মাঠগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব। লালমাটিয়া ডি ব্লকের মাঠটির অবস্থা উদ্বেগজনক। তদারকির অভাবে মাঠের বিভিন্ন স্থাপনার লোহালক্কড়, সিসিটিভি ক্যামেরা, এমনকি শিশুদের খেলনাও চুরি হয়ে গেছে। বেড়েছে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের আনাগোনা।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান স্বীকার করেছেন যে মাদকসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পুরোনো সমস্যা এবং তাঁরা সীমিত জনবল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের বিষয়টি স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

আমরা আশা করব, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মাঠগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। মাঠের ভেতরে বা সামনে কোনো ধরনের বাজার বা মার্কেট বসানোর সুযোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করেই মাঠগুলোকে ব্যবহার উপযোগী ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।