Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

উচ্চ আদালতের রায়কে স্বাগত 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর তথ্যসংক্রান্ত ফরম পূরণে মা ও বাবা—উভয়ের নাম লেখার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা বাতিল করে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক—তিনটির যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই হবে বলে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেটি কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয়, নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। দেরিতে হলেও  আমরা এই ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানাই। 

২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ব্লাস্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে যে রিট করেছিল, তারই চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয় ২৪ জানুয়ারি। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন। এর আগে অবশ্য ওই বছর আদালত আদেশ জারি করেছিলেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লৈঙ্গিক বৈষম্যমূলক চর্চা দূর করতে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় ও শিক্ষার অধিকারের স্বীকৃতিকে এগিয়ে নিতে হাইকোর্টের এ রায় গুরুত্বপূর্ণ। নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে সাংবিধানিক যে প্রতিশ্রুতি আছে এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করতে এর যথাযথ বাস্তবায়ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রায় প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, যখন রিটটি করা হয়, তখন শিক্ষা ক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। ফরমে অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম উল্লেখ করা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরম পূরণে বাবা অথবা মায়ের নাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে।

 যুগ যুগ ধরে সমাজে যে পিতৃতান্ত্রিক আধিপত্য চলে আসছে, উচ্চ আদালতের এই রায় তারও সমুচিত জবাব বলে মনে করি। এর মাধ্যমে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে বাবার অনুপস্থিতিতে যেমন মায়ের একক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, তেমনি সংবিধানে বর্ণিত নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়। 

এ রায় প্রসঙ্গে আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের সেই শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানাই, যিনি পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমিও শুনেছি, আমার বাবা কে। তারপরও আমি বাবার নামটি রেজিস্ট্রেশন ফরমে লিখতে পারিনি। কারণ, ওই লোকটি আমার মা ও আমাকে স্বীকৃতি দেননি।’ আমরা জানি না, সেই শিক্ষার্থী এখন কোথায় আছেন। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণেই তাঁর পড়াশোনার পথ বন্ধ হয়ে যায়। রাষ্ট্রের উচিত তাঁকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

আশা করি, আদালতের এ রায়ের পর বাবার নাম না লেখার জন্য আর কারও পরীক্ষা বন্ধ হবে না। সমাজে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ রকম বৈষম্যমূলক বিধান থেকে থাকলে তারও অবসান হওয়া জরুরি। এ মামলায় আইনি লড়াইয়ে ব্লাস্ট, মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষসহ যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সক্রিয় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

এ যুগান্তকারী ঘটনায় প্রথম আলো সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরেছে, সে জন্য আমরা আনন্দিত।