প্রতিবন্ধীদের পরিচয়পত্র

সমাজসেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম হতাশাজনক

জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে নাগরিকদের ভোগান্তির শেষ নেই। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো নিয়মিত সরব থাকলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এর মধ্যে প্রতিবন্ধীদের পরিচয়পত্র নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, তা আরও বেশি হতাশাজনক বলতে হয়। গত সোমবার সিলেট নগরের একটি ঘটনায় সেটি বেরিয়ে এসেছে। মৃত্যুর ছয় বছর পর প্রতিবন্ধী মেয়ের পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছেন এক বাবা। দেখা যাচ্ছে, আরও অনেক প্রতিবন্ধী শিশুর পরিচয়পত্র বছরের পর বছর ধরে আটকে আছে। এর ফলে প্রতিবন্ধীরা সরকারের দেওয়া নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সিলেট শহরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা এইচ এম শহীদুল ইসলাম। ২০১৩ সালে তাঁর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের জন্য প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র পেতে আবেদন করেন এবং সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে মেয়ের ছবিও তোলেন। শহীদুল একাধিকবার সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়েও মেয়ের পরিচয়পত্র পাননি। ২০০৭ সালে জন্ম নেওয়া সুমাইয়া ২০১৭ সালে মারা যায়। আর ২০২৩ সালের নভেম্বরের ১৩ তারিখ সমাজসেবা কার্যালয় থেকে শহীদুল ফোন পান তঁার মেয়ের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করার জন্য। এটি একজন বাবার জন্য কতটা অসহায় অবস্থা হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শহীদুলের প্রশ্ন, প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র তৈরি করতে ১০ বছর সময় লাগে কি না? তাঁর এ প্রশ্ন আমাদেরও। এরপরও শহীদুল নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় অবস্থিত সমাজসেবা কার্যালয়ে যান পরিচয়পত্রটি সংগ্রহ করতে। সেখানে শহীদুলের মতো আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীর দেখা পান প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি। একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে মারা গেছে গত বছর, তার বাবাকেও একইভাবে পরিচয়পত্রের জন্য ফোন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে জন্ম নেওয়া মেয়েটির জন্য পরের বছরই পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। পরিচয়পত্র না থাকার কারণে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সন্তানের জন্য সরকারি কোনো সহায়তা পাননি এই অভিভাবকেরা। অনেকে এখনো পাচ্ছেন না। 

কার্যালয়ে একটি টেবিলে শতাধিক পরিচয়পত্র বিতরণের জন্য রাখা দেখতে পেয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি। এর মধ্যে অধিকাংশ পরিচয়পত্র ২০১৬ সালে ইস্যুর তারিখ উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু পরিচয়পত্র ২০১৯ সালে ইস্যুর তারিখ উল্লেখ ছিল। ইস্যু হয়ে যাওয়ার পরও কেন এত দিন ধরে সেগুলো পড়ে আছে? প্রতিবন্ধীদের দেখভালের দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানের, তাদের কারণেই প্রতিবন্ধীরা এভাবে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না। এটি চরম দায়িত্বহীনতার নজির। সিলেট সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কোনো যুক্তি দিয়েই তাঁদের দায় এড়াতে পারেন না। এই কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।