
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদনসংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের আবেদনের নথিপত্র গায়েব হওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পারলেও, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি রাজউক। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার প্রধান কাজী মোহাম্মদ মাহাবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হারিয়ে যাওয়া সব নথি পুনরুদ্ধারে তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন তাঁরা। যেখানে ৩০ হাজার আবেদনকারীর নথি সার্ভার থেকে গায়েব হয়ে গেছে, সেখানে থানায় জিডি করা কিংবা উদ্ধারের চেষ্টা করা যথেষ্ট নয়।
রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে রাজউক থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নির্মাণের অনুমোদন নিতে হয়। আগে সনাতন পদ্ধতিতে কাজটি হতো। ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে রাজউকের আটটি অঞ্চলের মধ্যে শুধু একটি অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেওয়ার মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম শুরু করে রাজউক। ২০১৮ সালে সব অঞ্চলে অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের পাশাপাশি নির্মাণ অনুমোদন দেওয়ার কাজটিও শুরু হয়।
রাজউকে ৩০ হাজার আবেদনকারীর নথি এমন সময়ে হারাল, যখন ড্যাপ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজউকের সঙ্গে ভবনমালিকদের দর-কষাকষি চলছিল। ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য রাজউকের প্রণয়ন করা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গত ২৩ আগস্ট অনুমোদন দেয় সরকার। এর কারণে রাজউকের আওতাধীন বেশির ভাগ এলাকায় আগের চেয়ে কম উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হবে জমির মালিকদের। পরে জমির মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক সিদ্ধান্ত নেয়, যাঁরা ২৩ আগস্টের আগে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁরা আগের নিয়মে ভবন নির্মাণ করতে পারবেন।
৪ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক দিন পর রাজউকের ভবন নির্মাণসংক্রান্ত ওয়েবসাইটটি অকার্যকর হওয়াও রহস্যজনক। তাহলে কি ২৩ আগস্টের আগের তারিখে আবেদন দেখানোর জন্য কোনো স্বার্থান্বেষী মহল থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওয়েবসাইটটি অকার্যকর করা হয়? যেসব গ্রাহকের নথিপত্র হারিয়েছেন, তাঁরা ২০১৯ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি হারিয়ে যাওয়ার কারণে ওই গ্রাহকেরা নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। কেননা কোনো ভূমি বা ভবনের বিপরীতে ব্যাংকঋণ নিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রাজউক থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়।
এই গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো নিছক কারিগরি ত্রুটির কারণে হারাল, না এর পেছনেও কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি আছে, সেটা খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কমিটি করতে হবে। এ কাজে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষকদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাতে বুয়েটের একজন সাবেক অধ্যাপক ছিলেন। এ ধরনের ঘটনায় সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ম রক্ষার কমিটি করে এবং তারা গতানুগতিক একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে সত্য আড়ালে পড়ে যায় এবং দায়ী ব্যক্তিদেরও হদিস মেলে না। রাজউকের ৩০ হাজার নথি গায়েবের ঘটনায় তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবে কাম্য নয়।