সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জামালপুরে সমবায় বিপর্যয়

প্রতারিত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ান

দেশের নাগরিক যখন কোনো সংস্থার কাছে থেকে ঋণ নেন, তখন তাঁর প্রয়োজন হয় জামিনদারের। আর যখন কোনো সংস্থা নাগরিকের কাছ থেকে আমানত নেয়, তখন? জামিনদারের ভূমিকায় তখন অবতীর্ণ হয় রাষ্ট্র। কারণ, সরকারি নিবন্ধন দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র নিশ্চিত করে সেই সংস্থার বৈধতা। জামালপুরে সমবায় সমিতির কাছে নিঃস্ব হওয়া মানুষের দায়িত্ব কি রাষ্ট্র নেবে না?

প্রথম আলোর খবরে এসেছে, জামালপুরের মাদারগঞ্জে ২৩টি সমবায় সমিতি আমানতকারীদের হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। মাদারগঞ্জে হাজারো আমানতকারী নিজের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পেতে টানা তিন দিন উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে রেখেছেন। এই চিত্র শুধু মাদারগঞ্জের নয়, এটি বাংলাদেশের আর্থিক শৃঙ্খলার ভঙ্গুরতার চিত্রও বটে। কয়েক বছর ধরে ২৩টি সমবায় সমিতি উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, অথচ ২০২২ সাল থেকে সেই টাকার কোনো হদিস নেই।

এ ধরনের প্রতারণা এক দিনে গড়ে ওঠে না। রাষ্ট্রীয় তদারকির ঘাটতি, সমবায় অধিদপ্তরের উদাসীনতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা বছরের পর বছর এই দুর্নীতিকে পুষ্ট করেছে। সমবায় আইন অনুযায়ী প্রতিটি সমিতির হিসাব নিরীক্ষা করা, অনুমোদন নবায়ন ও আর্থিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা জেলা সমবায় কর্মকর্তার দায়িত্ব। কিন্তু এখন তাঁরা নির্বিকারভাবে বলছেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই।’ এ বক্তব্য শুধু দায়িত্ব এড়ানোর নয়, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার স্বীকারোক্তিও।

রাষ্ট্রের ভূমিকা হওয়ার কথা নাগরিকের সম্পদ ও আস্থার নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু এখানে রাষ্ট্রই পরিণত হয়েছে উদাসীন দর্শকে। যখন হাজারো মানুষ আমানত হারিয়ে পথে নামছেন, তখনো সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু প্রশাসনিক অদক্ষতা নয়, নৈতিক দেউলিয়াপনার প্রকাশ।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো এ ঘটনায় কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সমবায় সংস্থাগুলোর নিবন্ধন বাতিল হয়নি। মামলা করা হয়নি কিংবা আমানতকারীর টাকা উদ্ধার করতে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

আমরা মনে করি, এ বিষয়ে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির আর্থিক নথি জব্দ করে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট সমবায় কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তৃতীয়ত, সরকারকে আমানতকারীদের অর্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা দ্রুত নিতে হবে। কারণ, এ বিপর্যয়ের দায় জনগণের নয়, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতার ফল।

সমবায় ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল পারস্পরিক সহযোগিতা। অথচ এখন তা প্রতারণার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যদি সরকার এখনো নড়েচড়ে না বসে, তবে জনগণের আস্থা যেমন ভেঙে যাবে, তেমনি রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই আমরা আশা করি, অতিসত্বর জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সরকার মাদারগঞ্জের সমবায় সংকট নিরসন করবে।