রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৭০ দিনে ৩৫০ জনের বেশি সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এই বছর সাতজন আইসিইউতে ভর্তি রোগীর মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
বৃষ্টির মৌসুমে গ্রামগঞ্জে সাপের আনাগোনা বৃদ্ধিতে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। আর এমন রোগীর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো দ্রুত চিকিৎসা। দুঃখজনক হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও অনেক হাসপাতালে প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। ফলে বিভাগীয় হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে নিতে রোগীর আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজশাহীতেও রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে মারা যাচ্ছেন।
সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুতর বিষয় হচ্ছে, এখনো গ্রামাঞ্চলে কুসংস্কার আর ওঝার ওপর নির্ভরতার প্রবণতা প্রবল। অনেক ক্ষেত্রে সাপে কাটার পর রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে প্রথমেই ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে মূল্যবান ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নষ্ট হয়ে যায়। সাপে কাটা রোগীর ক্ষেত্রে গোল্ডেন আওয়ার বলতে সাপের কামড়ের পর থেকে প্রথম ১০০ মিনিটকে বোঝানো হয়। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময়ের মধ্যে অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধক দেওয়া গেলে সাপের বিষের প্রভাব কমানো যায় এবং রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে গণসচেতনতা তৈরি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুলশিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি যেমন ইমাম, পুরোহিতদের গণসচেতনতার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে। তবে এটি অবশ্যই জরুরি যে নিকটস্থ হাসপাতালে পর্যাপ্তসংখ্যক প্রতিষেধক থাকতে হবে। তখন মানুষের মধ্য সাপে কাটা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়বে।
কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের মাঠে কাজ করার ক্ষেত্রে গামবুট পরার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু গামবুট কেনার সামর্থ্য অনেক কৃষকের নেই। এ ক্ষেত্রে সরকার বিনা মূল্যে বা ভর্তুকি দিয়ে কম মূল্যে গামবুট বিতরণ করতে পারে। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতাও বাড়ানো প্রয়োজন। সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাসস্থান ও কৃষিকাজ, শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি ইত্যাদি উদ্দেশ্যে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। ফলে প্রাণীরা কোথাও আশ্রয় না পেয়ে বাধ্য হয়ে লোকালয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পিটিয়ে সাপ মারার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ মানুষ জানেই না, একটি সাধারণ সাপ বা ব্যাঙও পরিবেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ রক্ষা ও প্রাণী রক্ষার বিষয়টি নিয়েও গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।