সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বেহাল ১৮ মুজিব কিল্লা 

রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিন 

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে একসময় বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ছিল বাংলাদেশের। পরে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিতও হয়। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কা সইতে হচ্ছে। দুর্যোগের সময় মানুষের নিরাপত্তার জন্য উপকূলীয় এলাকায় একসময় আশ্রয়ণকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। সেগুলো পুরোনোও হয়ে গেছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় আরও বড় পরিসরে ও আধুনিক আশ্রয়ণকেন্দ্র তৈরি করছে সরকার। যেগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে মুজিব কেল্লা। কিন্তু সেসব কিল্লা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বেশির ভাগ মুজিব কিল্লার ক্ষেত্রে এমনটি দেখা গেছে। জনগণের জন্য নির্মিত সরকারি স্থাপনাগুলো এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিষয়টি দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কলাপাড়ায় ২০টি মুজিব কিল্লা তৈরির উদ্যোগ নেয়। ১৮টি তৈরি হয়ে গেছে, বাকি ২টি নির্মাণাধীন। মাটির উঁচু ঢিবির ওপর তৈরি করা এসব কিল্লা দেখতে বেশ নান্দনিকও। ভেতরে সোলারসহ বিদ্যুৎ–সুবিধা রয়েছে। রান্নাঘর, শৌচাগার, গভীর নলকূপ—সবই আছে। রয়েছে গবাদিপশু রাখার আলাদা জায়গাও। একেকটি কিল্লা নির্মাণে খরচ হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় এবং দেখাশোনার জন্য কাউকে দায়িত্ব না দেওয়ায় এসব কিল্লার অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিল্লাগুলোর ভেতরে ময়লা-আবর্জনায় ভরে রয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে সিলিং ফ্যান ও সোলার প্যানেল। কিল্লার চারপাশের মাটি রক্ষার জন্য দেওয়া কংক্রিটের ব্লকও ধসে পড়েছে।

আগের নির্মিত আশ্রয়ণকেন্দ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহুমুখী কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। কিন্তু মুজিব কিল্লার ক্ষেত্রে সেটি করা হচ্ছে। কিল্লার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপজেলা কার্যালয়ের বক্তব্য, কিল্লাগুলো স্থানীয় মানুষকে বহুমুখী কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত। এতে সেগুলো ভালো থাকবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রতিটি মুজিব কিল্লার রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে, কারা করবে, সবকিছুর একটা বিস্তারিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এরপর দেখভাল করার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। 

আমরা আশা করি, উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে আন্তরিক ভূমিকা রাখবে। সময়ক্ষেপণ না করে মুজিব কিল্লাগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।