নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত একের পর এক পৌরসভা গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আসলে নাগরিক সুবিধা কতটা নিশ্চিত করতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষ করে পানি সরবরাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। এর মধ্যে নোয়াখালী পৌরসভায় পানি সরবরাহ নিয়ে যে কাণ্ড চলছে, তা পৌরসভার বাসিন্দাদের প্রতি একপ্রকার প্রহসনই বলা যায়। বিল দিয়েও পানি না পাওয়ার এমন বঞ্চনা থেকে মুক্তি চান তাঁরা।
পানি নিয়ে পৌরসভাটির বাসিন্দাদের দুর্ভোগের একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রতি মাসেই ৬৫০ টাকা করে পানির বিল দিচ্ছেন চৌমুহনী পৌরসভার মধ্যম করিমপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের (৬৫)। কিন্তু পানির লাইনে এক ফোঁটা পানিও আসে না। বেশি পরিমাণে পানি পাওয়ার আশায় মোটা পাইপের সংযোগও নিয়েছেন, তাতেও পানি আসে না। লিখিত অভিযোগ করেছেন পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে, কোনো কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে পানি কিনে আনতে হয়। আর গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করছেন পাশের পুকুরের ময়লা পানি। এতে পরিবারের সদস্যদের অসুখ–বিসুখ লেগেই আছে। এভাবেই ভুগতে হচ্ছে তাঁর মতো আরও অনেক পরিবারকে।
পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়, তা দিয়ে পৌরসভার চাহিদার মাত্র ৬৫ শতাংশ মেটানো সম্ভব হয়। তার মানে বোঝা যায়, এখানে পৌরসভার সামর্থ্যের অভাব আছে। আবার পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তাই বলছেন, পানি সরবরাহের যেটুকু সামর্থ্য পৌরসভার রয়েছে, সেটুকুও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় না। তা ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পাইপলাইন বসানোর কারণে কোনো এলাকার গ্রাহক পানি পান, কোনো এলাকায় মোটেই পানি পাওয়া যায় না। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মূল পাইপলাইনের সঙ্গে অবৈধভাবে পাম্পের সংযোগ দিয়ে সরাসরি পানি তুলে নেন। এতে সাধারণ গ্রাহকের কাছে আর পানি পৌঁছায় না। অবৈধ ওই সব সংযোগের সঙ্গে পৌরসভার লোকজনও জড়িত আর ভুগতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, পানি সরবরাহে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গুরুতর অনিয়ম চলে আসছে। তা ছাড়া নিয়মিত বিল দিয়েও পানি না পাওয়াটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, এ সমস্যা নিয়ে তিনি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ পৌরসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা অবৈধ পাম্প দিয়ে পানি টেনে নিয়ে যাওয়াই পানিসংকটের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রথম আলো আগেও নোয়াখালী পৌরসভার পানি সরবরাহের এ সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় লিখেছে। আমরা আশা করব, এবারই এ সমস্যার অবসান হবে।