জামালপুরে বন্য হাতি

হাতি ও মানুষ উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বন্য হাতি নেমে আসার ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে এটি চলে আসছে। খাবারের সন্ধানে হাতির পাল প্রতি রাতেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে, ফসলি জমি নষ্ট করছে, সুপারি ও অন্যান্য গাছের বাগান গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে গ্রামবাসীর নির্ঘুম রাত কাটছে এবং তাঁদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এখন কীভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে এবং হাতিরও কোনো ক্ষতি করা যাবে না, সেই পদক্ষেপই নিতে হবে। 

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০টি হাতির একটি পাল রাতের আঁধারে বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে আতঙ্ক তৈরি করছে। এলাকাবাসীর হইহুল্লোড়, মশাল ও ঢাকঢোলের শব্দে হাতিরা ঘরবাড়িতে ঢুকতে না পারলেও, তাদের ফসলি জমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে অনেকে ভয়ে জমি পতিত রাখছেন এবং কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বন বিভাগ ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমগুলো হাতির ক্ষতি থেকে গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছে, যা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু এ ধরনের অস্থায়ী সমাধান একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। কর্মকর্তারা মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে বলছেন। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ কি কৃষকের সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল আর তাঁর মনের শান্তি ফিরিয়ে দিতে পারে?

এই সমস্যার মূল কারণ হলো বনাঞ্চল কমে যাওয়া এবং হাতির বিচরণক্ষেত্রে মানুষের অবৈধ অনুপ্রবেশ। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলোতে বন্য হাতির খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবের কারণেই তারা লোকালয়ে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। হাতি তার স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে ফেললে মানুষের বসতিতেই খাবার খোঁজে। এই প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী মূলত আমরা নিজেরাই।

এই সংকট নিরসনে বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য ও পানির উৎস নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাদের লোকালয়ে আসার প্রয়োজন না হয়। ইউক্যালিপটাস–আকাশমণির মতো ক্ষতিকর গাছগাছালি নয়, হাতির খাদ্যবান্ধব গাছ লাগাতে হবে। হাতি চলাচলের করিডরগুলো চিহ্নিত করে তা সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনো ধরনের নির্মাণ বা স্থাপনা সেখানে নিষিদ্ধ করতে হবে। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি তাঁদের হাতির আক্রমণ থেকে নিজেদের ও ফসল রক্ষার জন্য আধুনিক ও কার্যকর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কোনোভাবে হাতিকে আঘাত করা যাবে না, সে ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সবশেষে বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং ভারত সরকারের মধ্যে একটি কার্যকর সমন্বয় সাধন জরুরি। কারণ, এই হাতিগুলো উভয় দেশের সীমান্তে বিচরণ করে।