সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

গ্রাফিতি নিয়ে কর্মসূচি

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা অগ্রহণযোগ্য

পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদে গ্রাফিতিতে ‘আদিবাসী’ বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বুধবার ‘বিক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ প্ল্যাটফর্মের ব্যক্তিদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠনের কর্মীরা। সেই ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন বৃহস্পতিবার কিছু সংগঠন সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটকাতে পুলিশ যে আচরণ করল, তা-ও নিন্দনীয়।

পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদে বিগত সরকারের বিভিন্ন বয়ান বাদ দিয়ে নতুন বছরে সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়। একটি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে যুক্ত করা হয় ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি। সেই শব্দের জন্য গ্রাফিতিটি বাদ দেওয়ার দাবিতে গত রোববার ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবন ঘেরাও করে এবং সেখানে ঢুকে পড়ে। তাদের তো বাধা দেওয়া হলোই না, বরং তাদের হুমকি-ধমকির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি ওই বইয়ের অনলাইন ভার্সন থেকে গ্রাফিতিটি বাদ দেয়।

এরপর গ্রাফিতিটি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা প্ল্যাটফর্মে পাহাড়-সমতলের কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী ও তরুণদের একটি দল এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করতে গেলে বৃহস্পতিবার মতিঝিল এলাকায় তাদের নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির প্ল্যাটফর্মটির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। সেখানে পুলিশ থাকলেও তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে পুলিশের সামনে কীভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটল? এতে নাগরিক সমাজ বিক্ষুব্ধ হলে রাতে হামলাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নামে একটি ব্যানারে একদল বিক্ষোভকারী সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, কয়েকজনের একটি প্রতিনিধিকে তারা সচিবালয়ের দিকে যেতে বলেছিল। কিন্তু সেটি না করে ব্যারিকেড ভেঙে সবাই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তখন তাদের বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে, সেখানে পুলিশ যে আচরণ করেছে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আন্দোলনকারীদের ওপর যেভাবে লাঠিপেটা করা হয়েছে, তাতে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয় পুলিশি আচরণ। যে পুলিশ আগের দিনের হামলাকারীদের বাঁচাতে কোনো ভূমিকা রাখেনি, পরের দিনের বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগে তাদের কোনো দ্বিধাগ্রস্ত মনে হয়নি। পুলিশের এ দ্বৈতনীতি কেন?

বুধবারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেদিনের ঘটনার ছবি ও ভিডিওতে হামলাকারীদের চেহারা স্পষ্ট। ইতিমধ্যে তাদের দুজনকে ধরা হয়েছে। বাকি হামলাকারীদেরও ধরা হোক। আমরা আশা করব তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা মনে করি, নাগরিক মত প্রকাশের বাধা প্রদানকারীদের কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।